সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদ গুগলের পোল্যান্ড শাখা থেকে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বুয়েটের কম্পিউটার প্রকৌশল বিজ্ঞান থেকে ২০১৯ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বিভিন্ন কোম্পানী থেকে চাকরির প্রত্যাখান পাওয়ার পর অবশেষে গুগল থেকে অফার পেয়েছেন সাদ। তিনি মনে করেন এই প্রত্যাখান গুলোই হয়তো ছিল ভালোর ভালো। সাদ মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করেন।
বুয়েট সাংবাদিক সমিতি থেকে সাদ মুহাম্মদ জুনায়েদ এর কাছে গুগলে যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এ ব্যপারে বিস্তারিত জানালেন তিনি।
গুগল থেকে কিভাবে অফার টা পেলেন?
গুগলের ইন্টার্ভিউ প্রসেস বলা যায় অনেক বড়। আমি জানুয়ারির দিকে প্রথম ইন্টার্ভিউ কল পাই আমার বন্ধু অনিক (গুগলের ইওরোপিয়ান হেডকোয়ার্টার আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে কর্মরত) এর রেফারাল এর মাধ্যমে। এরপর একজন রিক্রুটার এর সাথে কথা হয়। কথাবার্তার আলোচ্য বিষয় ছিল আমার নিজের সম্পর্কে, আমার বর্তমান জব, কেন আমি জব সুইচ করতে চাই ইত্যাদি এবং তিনি আমাকে সংক্ষেপে ইন্টার্ভিউ প্রসেস সম্পর্কে একটি ধারণা দেন।
প্রথমে একটা ফোন কল রাউন্ড হয় ৪৫ মিনিটের, আমি আইডিয়া খুব দ্রুত বের করে ফেলি, কিন্তু নার্ভাসনেস এর কারণে কোডিং একদম নির্ভুল ছিল না। আমাকে দ্বিতীয় আরেকটি ফোন কল এর সুযোগ দেয়া হয়। দ্বিতীয় ফোন ইন্টার্ভিউ এ কোডিং একদম নির্ভুল ছিল বলা যায়। দুইটা ফোন ইন্টার্ভিউ ই গুগল মিট এ হয়েছিল, আর কোড করা হয়েছে গুগল ডকস এ।
পরের সপ্তাহে রিক্রুটার সুসংবাদ দেন যে আমি অনসাইট এ যাচ্ছি। কিন্তু কোভিড এর কারণে ভার্চুয়ালি হবে। অনসাইট মূলত ৫ টি ইন্টার্ভিউয়ের কম্বিনেশন। ৪ টি কোডিং এবং একটি বিহেভিয়ার সম্পর্কিত যেটি Googlyness নামে পরিচিত. দুর্ভাগ্যবশত আমার অনসাইট এর সময় আমার পুরো ফ্যামিলি কোভিড আক্রান্ত হয়। তাই কিছুটা মেন্টাল প্রেশার নিয়েই অনসাইট গুলো দেই। আল্লাহর রহমতে অনসাইট এর ফিডব্যাক গুলো পজিটিভ আসে। অনসাইট এর ফরম্যাটও ফোন কল রাউন্ড এর মত ছিল। এরপর শুরু হয় টিম ম্যাচিং রাউন্ড। দুইজন ম্যানেজার এর সাথে কথা হয়, তার মধ্যে BigQuery কে প্রেফার করি। এরপর আমার ফুল প্যাকেজ (CV, Interview Feedbacks) রিক্রুটার নিয়োগ কমিটির কাছে সাবমিট করে। এরপর কিছু ফর্মালিটি শেষ করে অবশেষে অফার পেলাম।
গুগলে কাজ করার ইচ্ছা কেন?
যখন বুয়েটে ক্লাস শুরু করি, সাদিয়া নাহরিন আপু কে নিয়ে অনেক হইচই দেখতাম, যে আপু গুগলে যাচ্ছেন। বলা যায় গুগলের আগ্রহ শুরু ওখান থেকেই। এরপর দেখি যে বুয়েট এর অনেক সিনিয়র ভাইয়া আপুই গুগল এ চলে যাচ্ছেন। গুগল নিয়ে বিভিন্ন গল্প শুনি যেমন তাদের ওয়ার্ক কালচার, জব চ্যালেঞ্জেস, আউটস্ট্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি ইত্যাদি। যে কোন জায়ান্ট কোম্পানি তে কাজ করাটাই আসলে বিশাল সুযোগ। প্রচুর জিনিস শেখা যায়, ক্যারিয়ার গ্রোথ এর অনেক সুযোগ থাকে। তাই সব মিলিয়ে গুগল ড্রিম জব বলা যায়।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি এখানে?
মূলত ক্যারিয়ার গ্রো্থ। এখন তো বলা যায় কিছুই পারি না। তাই শেখাটাই প্রধান লক্ষ্য।আমি বিগকুয়েরী টিম এর সাথে কাজ করব। এটা গুগল ক্লাউড এর অন্যতম হট প্রোডাক্ট বলা যায়। এখানে বিগ ডাটা, ডাটা সিকিউরিটি সহ অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ আছে। এখনও টিম এর সাথে অনবোর্ড হই নি। প্রসেসিং এ আছে অনেক কিছু। আমাদের টিম Seattle, USA এর সাথে কোলাবরেট করে কাজ করবে। গুগলে টপ লেভেল প্রোগ্রামাররা কাজ করে, তাই আশা করি তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারব, অনেক অভিজ্ঞতাও বাড়বে।
নিজের ব্যর্থতা গুলোকে কিভাবে দেখেন?
প্রথমে অনেক হতাশ লাগে যে ব্যর্থ হলাম, কয়েকদিন এনিম/সিরিজ দেখে হতাশা কাটানোর চেষ্টা করি। এরপর এনালাইসিস করা শুরু করি যে কেন ব্যর্থ হলাম, কোথায় ঘাটতি ছিল। আমি মনে করি প্রতিটি ব্যর্থতাই আসলে একটা গুড লার্নিং পয়েন্ট। ভুল গুলো ধরতে পারলে ইম্প্রুভমেন্ট এর অনেক সুযোগ থাকে।
One of my favorite quotes is “Hope rises like a phoenix from the ashes of shattered dreams.” – S.A. Sachs.
যারা গুগলের মত কোম্পানীগুলোতে জব করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
একেক কোম্পানির ইন্টার্ভিউ প্রসেস একেকরকম। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় হলঃ
১। প্রব্লেম সল্ভিং
২। কোডিং স্কিল এবং
৩। কমিউনিকেশন।
প্রব্লেম সল্ভিং স্কিল একদিনে তৈরি হয় না, বারবার প্রাকটিস করতে হয়। এমন না যে এর জন্য সব কিছু ছেড়ে সারাদিন প্রব্লেম সল্ভ আর কোডিং করতে হবে। কিন্তু নিয়মিত প্রাকটিসে থাকা ভাল। আর কমিউনিকশনটাও অনেক গুরুত্বপুর্ণ। ইন্টার্ভিউ সময় কিন্তু অল্প, প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট। এর মধ্যে প্রথমে প্রব্লেম বুঝতে হবে, সমাধান বের করতে হবে, এরপর নিখুঁত ভাবে কোড ও করতে হবে। আর পুরো সময় ইন্টার্ভিউয়ার এর সাথে সিঙ্ক ও করতে হবে, তাকে আইডিয়া বোঝাতে হবে।। তাই কোডিং স্পিড, প্রব্লেম সল্ভিং স্কিল আর কমিউনিকেশন সবগুলাই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট এর জন্য একটা বেস্ট ওয়ে, বিশেষ করে টিম কন্টেস্ট। এখানে একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে, তাই দ্রুত সমাধান বের করে আবার কোড ও নিখুঁত ভাবে করতে হয়, সব কর্নার কেস হ্যন্ডেল করতে হয়। আবার টিম কমিউনিকশন করতে হয়, কারণ অনেক প্রব্লেম তুলনামুলুকভাবে কঠিন থাকে, তাই একাধিক জন মিলে ডিসকাস করতে হয়। তাই আমার পরামর্শ হল নিয়মিত কনটেস্ট করা।
আর প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট না করে বা কনটেস্ট এ ভাল না করলে যে সুযোগ পাওয়া সম্ভব না, সেটাও সত্য নয়। ইন্টার্ভিউ প্রব্লেম গুলো অনেক ভিন্ন রকমের হয়। অন্য কোন ভাবে স্কিল গ্রো করতে পারলেও গুগল এর মতন কোম্পানি তে আসার ভালো সুযোগ থাকবে।
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!