আর্কিটেকচারের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন কিরকম হতে পারে? আর্কিতে এপ্লাই করলে ইইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্য সাবজেক্ট গুলোতে ভর্তি হতে পারব কিনা? এরকম নানাবিধ প্রশ্ন অনেক জুনিয়ররের কাছ থেকে পাওয়ায় এ বিষয়ের সব কনফিউশন এই প্রতিবেদনে পরিষ্কার করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।
আমরা সবাই - ই নিশ্চয়ই জানি যে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা হয় মূলত দুই গ্রুপে। গ্রুপ “ক” অর্থাৎ ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য লিখিত পরীক্ষা হয়। আর গ্রুপ “খ” অর্থাৎ স্থাপত্য বিভাগের জন্য লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি আরেকটা ড্রয়িং পরীক্ষা দিতে হয়।
পরীক্ষা পদ্ধতি
যারা গ্রুপ “ক” এর জন্য ফর্ম ফিলআপ করবে, তাদের জন্য শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং এর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে, এক্ষেত্রে তারা স্থাপত্য বিভাগের জন্য পরীক্ষায় বসতে পারবে না। তবে যারা গ্রুপ “খ” এর ফর্ম ফিলআপ করবে, তারা লিখিত ও ড্রয়িং দুটো পরীক্ষাতেই অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে (লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক) এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা স্থাপত্য দুই অনুষদের জন্যই চেষ্টা করতে পারবে।
প্রশ্নের ধরন ও মানবণ্টন
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপদ্ধতি ও মানবণ্টনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। প্রথমেই আসি লিখিত পরীক্ষায়। এখানে এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পাঠ্যক্রম অনুযায়ী ৪০০ নম্বরের একটি পরীক্ষা হবে। সময় থাকবে ১২০ মিনিট অর্থাৎ ২ ঘণ্টা। গণিত থেকে ১৪ টি, পদার্থবিজ্ঞান থেকে ১৩ টি ও রসায়ন থেকে ১৩ টি প্রশ্ন থাকবে এবং প্রতিটি প্রশ্নের মান হবে ১০।
স্থাপত্য অনুষদের জন্য ২৫০ নম্বরের একটি পরীক্ষা হবে। সময় থাকবে ৯০ মিনিট অর্থাৎ দেড় ঘণ্টা। লিখিত পরীক্ষার পর একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে এই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষাটি হবে দুটো ভাগে। বরাবরের মতোই একটা ভাগে থাকবে মুক্তহস্ত অঙ্কন (Freehand Drawing)। অন্য ভাগটি এ বছর থেকে নতুন সংযোজিত হয়েছে। সেটা হলো দৃষ্টিগত ও স্থানিক ধীশক্তি (Visual - spatial Intelligence)।
মুক্তহস্ত অঙ্কনের জন্য ৩ টি প্রশ্ন থাকবে ও প্রতিটি প্রশ্নের মান হবে ৭০। অর্থাৎ ২১০ নম্বর চলে যাচ্ছে এই ভাগে। বিগত বছরগুলোতে ৫ টি প্রশ্ন আসত। প্রশ্নের বিষয়বস্তু ছিল খানিকটা এরকম :
১। কম্পোজিশন (ডট, লাইন, শেপ একেকভাবে সাজিয়ে)
২। লোগো/পোস্টার/বুক কভার ডিজাইন
৩। হিউম্যান ফিগার ড্রয়িং
৪। সিনারিও ড্রয়িং
৫। পার্সপেক্টিভ ড্রয়িং
এ বছর যেহেতু প্রশ্নসংখ্যা কমিয়ে ৫ থেকে ৩ এ আনা হয়েছে এবং সার্কুলারেও আর কিছু বলা হয়নি, ধারণা করা যাচ্ছে যে এই ৫ টি টপিকের মধ্যে যেকোনো ৩ টি থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
এরপর থাকছে দৃষ্টিগত ও স্থানিক ধীশক্তি। এটি যেহেতু বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার নতুন সংযোজন, তাই তুলনামূলক সহজ কিছুই দেয়া হবে। এখানে ৪ টি প্রশ্ন থাকবে ও প্রতিটি প্রশ্নের মান হবে ১০। অর্থাৎ এই ভাগে থাকছে মোট ৪০ নম্বর। এই ভাগের প্রশ্নগুলো স্থাপত্য বিভাগের পড়াশোনার সাথে একটু বেশি সম্পর্কিত এবং এগুলো দিয়ে পরীক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরীক্ষা করা হবে।
এক্ষেত্রে কিছু নমুনা প্রশ্ন হতে পারে এমন :
একটি বক্সের ছবি দিয়ে উত্তর/দক্ষিণ/পূর্ব/পশ্চিম/পার্স্পেক্টিভ ভিউতে বক্সটি দেখতে কেমন হবে সেটা আঁকতে বলা
একটা ফর্মকে (ঘনক/কোণক/গোলক/পিরামিড ইত্যাদি) খোলা হলে তার তলগুলো দেখতে কেমন হবে
একটা ত্রিমাত্রিক ফর্ম দিয়ে সেটা কী কী দ্বিমাত্রিক শেইপ দিয়ে তৈরি তা জানতে চাইল
একটা যৌগিক (composite) ফর্মের ছবি দিয়ে সেটা কী কী বেসিক ফর্ম দিয়ে তৈরি তা জানতে চাইল
বেসিক শেইপ/ফর্ম ব্যবহার করে কম্পোজিট ফর্ম জেনারেশন
এখানে বলে রাখা ভালো, যেহেতু এই ভাগটি একেবারেই নতুন, এটা নিয়ে অমূলক ভয় পাওয়ার দরকার নেই। ড্রয়িং এর মৌলিক নিয়মগুলো জানলে এগুলো খুব সহজেই পারা যাবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতি
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় সব সময় গ্রুপ “ক” ও গ্রুপ “খ” এর জন্য আলাদা করে দুটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়।
গ্রুপ “ক” এর পরীক্ষার্থীদের জন্য একটাই মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। এই তালিকায় যাদের নাম থাকবে তারা ইঞ্জিনয়ারিং অনুষদের বিভাগগুলোতে পড়ার সুযোগ পাবে।
গ্রুপ “খ” এর পরীক্ষার্থীদেরকে দুটো উপায়ে মূল্যায়ন করা হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের জন্য শুধুমাত্র তাদের লিখিত পরীক্ষার নম্বর যাচাই করে সেই হিসাবে গ্রুপ “ক” এর পরীক্ষার্থীদের সাথে মিলিতভাবে একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। আর লিখিত এবং ড্রয়িং অর্থাৎ ৪০০+২৫০ মোট ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে গ্রুপ “খ” এর পরীক্ষার্থীদের নিয়ে আলাদা একটা মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে শুধুমাত্র স্থাপত্য বিভাগের জন্য।
ফলাফল পরবর্তী বিষয়াদি
ফলাফল দেয়ার পর গ্রুপ “খ” তে অংশগ্রহণকৃত একজন পরীক্ষার্থী ৩ উপায়ে উত্তীর্ণ হতে পারে :
১। শুধু গ্রুপ “ক” এর মেধাতালিকায় নাম আসল : এর অর্থ সে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের কোনো বিভাগে পড়ার সুযোগ পাবে।
২। শুধু গ্রুপ “খ” এর মেধাতালিকায় নাম আসল : এর অর্থ সে শুধু স্থাপত্য বিভাগে পড়ার সুযোগ পাবে।
৩। উভয় গ্রুপের মেধাতালিকায় নাম আসল : এর অর্থ সে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের কোনো বিভাগ বা স্থাপত্য বিভাগ যেকোনোটাতেই পড়তে পারবে। এক্ষেত্রে সে তার ইচ্ছামতো যেকোনো একটি নির্বাচন করতে পারবে। স্থাপত্য বিভাগে পড়তে চাইলে সেটা নির্বাচন করবে। আর যদি সে ইঞ্জিনিয়ারিং নির্বাচন করে তবে মেধা তালিকায় তার অবস্থান অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোনো একটি বিভাগে পড়ার সুযোগ পাবে।
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!