"সত্যে, সাম্যে, একতায়"

পুবের হাওয়া! (১ম অংশের পর.......)






পুবের হাওয়া! (১ম অংশের পর.......)


পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তার ডিপার্টমেন্ট নোটিস বোর্ড ঘাটলাম। নামটা জানি এখন, অনেক তথ্য খুজে বের করা যাবে এখন। কিছুদিন আগেই তাদের রেজাল্ট হয়েছে। তাই একই সাথে পুরো নাম এবং ফলাফল দুটোই জানা যাবে। প্রথম বর্ষের নোটিস বোর্ড ঘেটে ফারিন নামের কাউকে পাওয়া গেলো না। ভাবলাম হয়তো ফার্স্ট ইয়ার না, সেকেন্ড ইয়ার হবে। সেকেন্ড ইয়ারের নোটিস বোর্ড ঘাটলাম, সেখানেও একই অবস্থা, ফারিন নামের কেউ নেই। এভাবেও থার্ড ইয়ারের নোটিস বোর্ডও দেখলাম, ফলাফল শূণ্য। ফোর্থ ইয়ারের নোটিস বোর্ড খুজে ফারিন নাম পাওয়া গেলো। কিন্তু বিপত্তিটা অন্য জায়গায়, ফারিন নামের মানুষ দুজন। একজন, তাসফিয়া আক্তার ফারিন। আরেকটা, ফারিন সালসাবিল। আমার তখন মাথা ঘুরাচ্ছিল। এতোদিনে আমি তাঁকে ফার্স্ট ইয়ার ভেবে আসলাম, তার উপর কোনটা আসল ফারিন, সেটা খুজে বের করা আরেক চ্যালেঞ্জ।


মাথায় আইডিয়া আসলো। ফেসবুকের যুগে মানুষকে খুজে পাওয়া তো সহজ। দুটো নাম দিয়েই সার্চ করলাম। অবশেষে পাওয়া গেলো তাঁকে। তার নাম ফারিন সালসাবিল। কিন্তু সে যে আমার তিন বছরের সিনিয়র ভার্সিটি তে। পরক্ষণে মনে পড়লো, সিনিয়র দের পছন্দ করা তো দোষের কিছু না। মোহাম্মদ (সঃ) তো নিজের চেয়েও অধিক বয়সী মহিলা কে বিয়ে করেছিলো। ইউলিয়াম শেক্সপিয়রও সিনিয়র বিয়ে করেছিল। এমনকি বিবাহিত মহিলা কে ভাগিয়ে বিয়ে করেছিল, এবং বিয়ে করার সময় তার স্ত্রী তিন মাসের সন্তান সম্ভবা ছিল। এমনকি বড় মানুষরাই সিনিয়র পছন্দ করে। যেমন – ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, স্প্যানিশ ফুটবলার পিকে, বলিউড অভিনেতা অভিশেখ বচ্চন। তারা যখন পেরেছে, আমারও একটা সম্ভাবনা আছে।


পরের এক সপ্তাহ জুড়ে তাঁকে খুজে বেড়ালাম। খুজে পেলাম না। তার ডিপার্টমেন্টের সামনে ঘুরাঘুরি করতে করতে মানুষজনও সম্ভবত আমাকে চিনে গিয়েছে। ঐদিন নাম খুজতে গিয়ে নোটিস বোর্ড দেখেছিলাম, কিন্তু তার রেজাল্ট এর দিকে খেয়াল করা হয়নি। তাই আবারো গেলাম রেজাল্ট দেখতে। সিজিপিএ ৩.৮৯। এটা দেখে আমার দমে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমার সিজিপির তার আশে পাশেও নেই। যাইহোক, একদিন রাতে আবারো তাঁকে স্বপ্ন দেখলাম। প্রতিবারের মতোই অদ্ভুত স্বপ্ন – আমি কি বোর্ডে টাইপিং টেস্ট দিচ্ছি। শব্দ আসবে মনিটরে, আমি সেটা সঠিকভাবে টাইপ করতে হবে। কিন্তু প্রত্যেকবারই একই শব্দ আসছে মনিটরে, ফারিন সালসাবিল। এবং প্রত্যেক বারই আমি ভুল টাইপ করছি। আশ্চর্য! আমার তো টাইপিং স্পীড মিনিটে ৫০ শব্দেরও বেশি। অথচ আমি এবার পেলাম শূন্য। রাগে দুঃখে গরগর করতে থাকলাম। ঘুম ভাঙার পর বুঝতে পারলাম, আমি স্বপ্ন দেখেছি।


আজকে মনে হয় ফারিনের সাথে আবারো দেখা হবে। স্বপ্ন দেখার পর তার সাথে আমার দেখা হয়, এটাই আমার ফোর্থ ‘ল। নতুন ‘ল যুক্ত করলাম নিজের জীবনে। সেদিন অডিটোরিয়ামে তাদের ডিপার্টমেন্ট এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। ভাবলাম, এই সুযোগে হয়তো দেখা হয়ে যাবে তার সাথে। অডিটোরিয়ামের সামনে থেকে যতগুলো সিট দেখা যায়, সবগুলো সিটেই তাঁকে খুজছিলাম। কিন্তু তাঁকে খুজে পাচ্ছিলাম না। সামনে দিয়ে পায়চারি করতে করতে আমার পায়ের সাথে মাইক ও সাউন্ডবক্সের তার আটকে গিয়ে কানেকশন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনুষ্ঠান হঠাতই আমার কারণে ইন্টারাপ্টেড হয়ে যায়। স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার দিকে অগ্নিমূর্তি হয়ে তাঁকিয়ে আছে উপস্থাপিকা মেয়েটি, সে মেয়েটি যাকে আমি এতোক্ষণ দর্শকদের মাঝে খুজছিলাম। এবারো তার সাথে আমার অভিজ্ঞতা খুবই লজ্জাজনক। নিজের উপরই নিজের বিরক্ত লাগছিল এবার।


সেদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখলাম, আমাকে দিয়ে ফারিন ‘ইয়ং এর ডাবল স্লিট এক্সপেরিমেন্ট’ করছে। আমাকে পেছন থেকে লাথি মারছে, আর আমি চাকতির মতো ঘুরতে ঘুরতে, ধাক্কা খেতে খেতে স্লিট দিয়ে অপর পাশে গিয়ে আছাড় খাচ্ছি। এর চেয়ে অবান্তর স্বপ্ন আর হতে পারে না। কিন্তু এই মেয়ের সাথে আমার স্বপ্নের অভিজ্ঞতাও বাজে। বাস্তবে তো আরো বাজে।


সেদিন রাতে আর ঘুমই আসলো না। মন মেজাজ দুই-ই খারাপ। ফেসবুকে একটা লেখালেখির গ্রুপের সদস্য ছিলাম। বসে বসে তার সাথে আমার ঘটে যাওয়া সমস্ত গল্প লিখলাম, গল্পের শিরোনাম দিলাম ‘ক্যাকটাস’। পোস্ট এপ্রুভ হবে কি হবেনা, জানি না। পোস্ট করেই ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন সকালে উঠে দেখি, পোস্ট এপ্রুভ হয়েছে। অনেক রিয়েকশনও এসেছে, কিন্তু অধিকাংশই ‘হাহা’ রিয়েকশন। কমেন্টে দেখলাম ফারিনের দুই-তিনজন বান্ধবী-রা তাঁকে মেনশন দিচ্ছে। এরা কি ‘ক্যাকটাস’ শিরোনাম দেখে মেনশন দিয়েছে, নাকি আমাকে চেনে বলে মেনশন দিয়েছে, জানি না। ভয় পাচ্ছিলাম দেখে, আবার কেমন লজ্জার মধ্যে পড়ে যাই, কে জানে। এবার সামনা সামনি দেখা হলে সত্যি মাইর দেয় কিনা।


সারাদিন অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম, ফেসবুকে আর আসতে পারিনি। বিকেলে যখন ফেসবুকে আসলাম, তখন দেখি ফারিনের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। সাথে মেসেজও দিয়েছে- - কফি? কালকে বিকেলে ৪টায়? ফ্রেন্ড’জ ক্যাফে?


আমার তখন হার্ট বিট বেড়ে তিনগুন হয়ে গিয়েছে। সব কি ঠিক আছে? নাকি স্বপ্ন দেখছি এবারো? নাহ! ঠিকই তো আছে, সবই বাস্তব। উত্তর দিলামঃ - হ্যাঁ! কালকে বিকেল।


আমার অসহায়ত্ব দেখে মনে হয় তার মন গলেছে। আবারো ফার্স্ট ‘ল কাজ করলো। আরো ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে? এই ২৪ ঘন্টাই সম্ভবত আমার জীবনের দীর্ঘতম এক দিন। সময় কাটছিল না। ভাবলাম সময় কাটানোর জন্যে আগে আগে ঘুমিয়ে যাই। ঘুম ভেঙে গেলো রাত তিনটায়। স্বপ্নে দেখলাম – ফারিন আমাকে ধমকাচ্ছে, আমি সরি বলছি। সে আরো বেশি ধমকাচ্ছে আমাকে। আমি আরো বেশি সরি বলি। সে আরো বেশি ধমকাচ্ছে। এভাবে তীব্রতা বেড়েই চলছে। এ স্বপ্ন দেখার পর বাকি রাত আর ঘুম হয়নি।


পরদিন দুপুর দুইটার পর থেকেই প্রস্তুত হয়ে বসে আছি। চারটা কেনো আসছে না? সাড়ে তিনটায় গিয়ে রেস্টুরেন্টে পৌছালাম। কিছুক্ষণ পর সে আসলো। মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মহিলার সামনে আমি বসে আছি। এতোদিন তাঁকে অল্পবয়স্কা বলেই মনে হতো, কিন্তু আজকে তাঁকে প্রাপ্তবয়স্কা-সুন্দরী রমণীর মতোই লাগছে। যথারীতি আমার থার্ড ‘ল কাজ করতে শুরু করেছে, আমি বলতে চাই এক, বলে ফেলি আরেক।


দুইটা কফি অর্ডার করলাম। কফি আসলো সামনে। কফি নিতেই হাত থেকে ফসকে গরম কফি গিয়ে পড়লো আমার প্যান্টের উপর। সেকেন্ড ‘ল ও কাজ করছে তাহলে। মন চাচ্ছে জোরে এক চিৎকার দিয়ে নিজেকে শান্ত করি, কিন্তু সে সুযোগ নেই। সামনে একজন স্পেশাল মানুষ বসে আছে। ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে। এদিকে আমার অবস্থা দেখে ফারিন হাসতে হাসতে ক্লান্ত। মধুর সে হাসি।


প্রথম বারের মতো আমি শান্ত গলায় বললামঃ মনে হচ্ছে, আরেকবার কফি এভাবে পড়ে গেলে ভালো হতো। আবার শুরু থেকে তোমার হাসি দেখতে পেতাম। এ কথা শুনে সে তার কফির মগ টা এগিয়ে দিয়ে বললোঃ নাও! ফেলো আবার।


আমি উত্তর দিলামঃ সমস্যা নেই। আরেকটা অর্ডার দিয়ে সেটা ফেলছি। এটা তুমি-ই নাও। সে এখনো হেসেই যাচ্ছে আমার বোকামি দেখে। আর আমি মনে মনে বলে উঠলামঃ


“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা, সেদিন চৈত্রমাস, তোমার চোখে দেখেছিলেম, আমার সর্বনাশ!”


মন্তব্য করতে লগিন করুন
লগিন
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!
সম্পর্কিত
এখন থেকে বুয়েটে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরণের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রক্ষা, শিক্ষার মান … বিস্তারিত


ছাত্রলীগ নির্মমতার শিকার বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

শহীদ আবরার ফাহাদ কেবল বুয়েটিই নয় বরং গোটা বাংলাদেশের জন্য … বিস্তারিত


ফেরি ডিজাইনে বুয়েটের সাফল্যগাঁথা: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের জয়যাত্রা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন (WFSA) বিশ্বজুড়ে নিরাপদ ফেরির … বিস্তারিত


বুয়েটে ফের নিষিদ্ধ হলো লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি

২৮সেপ্টেম্বর, ২০২৪: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাডেমিক কাউন্সিল সম্প্রতি এক … বিস্তারিত


আবারো ক্লাস -পরীক্ষা বয়কটে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে আশানুরূপ‌ কোন তৎপরতা … বিস্তারিত