#blog পুবের হাওয়া! [DISCLAIMER: ALL THE CHARACTERS AND INCIDENTS MENTIONED IN THIS STORY ARE IMAGINARY.]
প্রচলিত অর্থে ক্রাশ বলতে কি বুঝায়, আমার কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না। বন্ধু-বান্ধবদের অনেককেই এই শব্দ ব্যবহার করতে শুনি। কিন্তু এটা বলতে মনের কোন অবস্থাটা বুঝায়, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। ভালো লাগা কে বুঝায়? কতোটুকু ভালো লাগা? অথবা কি লক্ষ্মণ দেখলে বুঝতে হবে, আমি কারো উপর ক্রাশড? জানি না আমি।
আমার কখনোই কাউকে খুব বেশি ভালো লাগেনি, যতটা ভালো লাগলে তাঁকে ক্রাশ বলা যেতে পারে। তবে প্রথমবার “কালা চশমা” গানের ক্যাটরিনা কে দেখে মনে হলো, একে আমার একটু বেশিই ভালো লেগেছে। সে অর্থে সে আমার প্রথম ক্রাশ। কলেজ জীবনে এক আর্মি মেয়ে ক্যাডেটের ছবি দেখলাম ফেসবুকে। নেইম প্লেটে নাম লিখা “ফারহানা”। এক দেখাতেই তাকেও অনেক পছন্দ হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে আর্মি নারী অফিসাররা হবার কথা রাফ এন্ড টাফ, চেহারায় কোনো মায়া থাকবে না, দেখে ভয় ভয় লাগবে। তার মধ্যে এসব ছিলনা, বরং সব কিছুই ছিল তার উল্টা। সে ভালো লাগাও বেশিদূর আগানোর সুযোগ হয়নি। বাস্তবে তো কোনদিন দেখিনি। সে ছিল আমার দ্বিতীয় ক্রাশ।
এবার আসি তৃতীয় ক্রাশের গল্পে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে একদিন গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, এক বন্ধুর জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। এক মেয়েকে দেখলাম রাস্তা পার হচ্ছে। কাউকে দেখে আমার মাথায় কখনো কোনো উপমা আসেনি। এই প্রথম একটা মেয়েকে দেখে মুহুর্তের মধ্যেই আমার মাথায় এক উপমা আসলো। তার চলন যেনো শঙ্খচিলের শান্ত পাখনায় উড়ে চলার মতো। বাতাসের সঙ্গে যেনো ভেসে ভেসে হাটছে, বাতাসও তাল দিচ্ছে তার চলনে। সিনেমায় অনেক স্লো মোশন দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে এই প্রথমবার। মনে হচ্ছিল, সব কিছু ধীরগতি হয়ে গিয়েছে, আর আমার মস্তিষ্ক সেটা ভিডিও ধারণ করে রাখছে। মেয়েটাকে দেখে উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্রী বলে মনে হচ্ছে। অল্পবয়স্কা বা কলেজ পড়ুয়া হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা না। হয়তো প্রথম বর্ষে পড়ছে।
সেদিনের সে মুহুর্তগুলো আমার মস্তিষ্ক ভালো ভাবেই ধারণ করতে পেরেছিল। আমি চোখ বন্ধ করে সে মুহুর্তগুলো রি-প্লে করে দেখতে পাচ্ছিলাম। সমস্যা নেই, পৃথিবীটা তো গোল। এর সাথে আমার আবারো দেখা হবে, আমি জানি। কিন্তু না, আমার ধারণা ভুল। পরবর্তী তিন মাসেও তার সাথে আমার আর দেখা হয়নি।
একরকম ভুলেই গিয়েছিলাম তার কথা। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে কিছু স্পেশাল ‘ল কাজ করে। তার মধ্যে ফার্স্ট ‘ল হচ্ছে – WHEN I’M ABOUT TO QUIT SOMETHING, THEN THE THING ITSELF COMES WITH A HOPE. এবারো তাই ঘটলো। তার সাথে আবারো দেখা। তার সাথে তার অনেক বান্ধবী। আমি দুই কানকে তাদের কথাবার্তায় আড়িপাতার জন্যে নিয়োজিত করলাম। যদিও তাদের কথাবার্তার কোনো আগা মাথা বুঝতে পারিনি। মেয়েদের কথার বিষয়গুলো সাধারনত অবান্তরই হয়। তা-ই সেসব কথা আমার বোঝার কথাও নয়। কিন্তু একটা ইনফরমেশন আমার মস্তিষ্ক ক্যাপচার করলো। তার বান্ধবীরা তাঁকে ‘ক্যাকটাস’ বলে সম্বোধন করছে। কারো নাম কি ক্যাকটাস হতে পারে? কি অদ্ভুত নাম।
তাদের কথার দিকে খেয়াল করতে করতে অন্যদিকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছি। একটা রিক্সা এসে পেছন থেকে দিলো এক ধাক্কা। সাথে সাথে আমি পড়ে গেলাম নিচে। তারা সবাই কথা থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বলেছিলাম না, আমার ক্ষেত্রে কিছু স্পেশাল ‘ল কাজ করে। এটা হচ্ছে সেকেন্ড ‘ল – WHEN YOU TRY TO MAKE THE SITUATION BETTER, IT GETS WORSE. আমার সম্পর্কে তার প্রথম ইম্প্রেশন এমন না হলে কি পারতো না? অবশ্যই পারতো। কিন্তু সেকেন্ড ‘ল তো মানতেই হবে, কিছু করার নেই।
সেদিন রাতে আমি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম, আমি নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে গেলাম। আশে পাশে প্রচুর মানুষের ভিড়। হঠাৎ খেয়াল করলাম, ক্যাকটাসও কেনাকাটা করছে, পরনে সবুজ জামা। ডানদিকে ঘুরতেই দেখি, ক্যাকটাস রিক্সা থেকে নামছে, পরনে গোলাপি রঙের জামা। পিছনে ঘুরতেই দেখি সে মেয়েটাই ভেলপুরি খাচ্ছে, পরনে কালো পোশাক। ব্যাপার কি? পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম, আমার দু চোখে যত মেয়েকে দেখছি, সবার চেহারাই এক। সেটা আর কেউ না, ক্যাকটাস। এসব দেখতে দেখতেই ঘুম ভেঙে যায়।
দুইদিন বা তিনদিন পর সে মেয়েকে আবারো দেখতে পেলাম। ভাবলাম, কথা বলে আসি। আগের দিনের খারাপ ইম্প্রেশন কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। কিন্তু এবার থার্ড ‘ল কাজ করলো – STUTTERING WILL START WHEN SPEAKING IN FRONT OF MORE PREFERRED PERSON. কথা বলতে গিয়ে তোতলামি শুরু করে দিলাম। অনেক কষ্টে বললাম – “হাই! আমি সালেহ। তুমি ক্যাকটাস না?”
হঠাৎ দেখলাম তার মুখ কালো হয়ে গিয়েছে। বলতে শুরু করেছে – ‘ক্যাকটাস? ফাইজলামি করার আর জায়গা পাও না? ……………’। এরপর সে আর কি বলেছে, আমি জানি না। কারণ ততক্ষণে আমার কান অফলাইন মোডে চলে গিয়েছে, মস্তিষ্ক ব্ল্যাক আউট ফেজে আছে। আমার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক হতে প্রায় এক মিনিট সময় লাগলো। চেতনা ফেরত আসার পর দেখতে পেলাম, সে কিছুদূর সামনে চলে গিয়েছে, সাথে তার বান্ধবী। সে তার বান্ধবীকে বলছে – ‘তোরা আমার বান্ধবী, তোরা মজা করে ক্যাকটাস বলিস, সেটা মানা যায়। তাই বলে এই ছেলে আমাকে ক্যাকটাস বলবে? বেয়াদব ব্যাটা একটা’। এতোক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম, তার আসল নাম ‘ক্যাকটাস’ না, এটা বান্ধবীদের দেয়া উপনাম। আবারো সেকেন্ড ‘ল এর কাছে হেরে গেলাম আমি।
মাঝে অনেকদিন কেটে যায়। তার সাথে আর দেখা হয়না। ভাবলাম, ঘটনা মনে হয় এখানেই শেষ। আর সামনে আগাবে না কিছু। কিন্তু একদিন রাতে স্বপ্ন দেখলাম – গেম অব থ্রোনস এ এমিলিয়া ক্লার্ক যে ড্রাগনের পিঠে চড়ে বেড়ায়, সে একই ড্রাগনের পিঠে চড়ে ক্যাকটাস আমার বাসার সামনে। এসেই ড্রাগন কে হুকুম দিলো, আর ড্রাগন আমার বাসায় আগুন ধরিয়ে দিল। ক্যাকটাস আমার বাসা চিনলো কিভাবে, বুঝলাম না। ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম, এটা একটা স্বপ্ন ছিল। এতোদিন পর ঐ মেয়েকে কেনো স্বপ্ন দেখলাম, জানি না।
ঠিক সেদিনই, তার সাথে রাস্তায় দেখা। কিন্তু সাথে দেখি একটা ছেলে। কে এই ছেলে? কোনো তথাকথিত ছেলে বেস্ট ফ্রেন্ড নাকি? নাকি আবার বয়ফ্রেন্ড? কোনো রকম পটেনশিয়াল থ্রেট বরদাস্ত করা হবে না। আপাত দৃষ্টিতে খারাপ মনে হলেও চলার পথে কোনো পটেনশিয়াল থ্রেট রাখা যাবে না। যেমন – কিউবায় যখন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আসলো, আমেরিকা সেটা নিজেদের জন্যে থ্রেট মনে করলো। কিউবা কে স্যানশন, ফিডেল ক্যাস্ট্রো কে হত্যা চেষ্টা সহ কোনো কিছুই বাদ দেয় নি। একই কথা রাশিয়া-ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইউক্রেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়ে যায়, তাহলে প্রতিবেশি রাষ্ট্র রাশিয়ার জন্যে তা একটা থ্রেট। তা-ই রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করেছে। এরকম উদাহরণ আরো আছে, রাণী ক্লিওপেট্রা তার সিংহাসন হারানোর ভয়ে নিজ ভাইকে বিয়ে করেছেন।
আমি ঐ ছেলেকে ভালো করে চিনে রাখলাম। পরবর্তীতে তার সম্পর্কে খোজ খবর নিলাম। ফেসবুকেও খুজে বের করলাম। ফেসবুক ঘেটে জানতে পারলাম, তার গার্ল ফ্রেন্ড আছে, সেটা অন্য কেউ। নিশ্চিন্ত হলাম মনে মনে। সম্ভবত ক্যাকটাসও একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে, তাই একসাথে দেখা গিয়েছিল তাদের। কিন্তু ঐ ছেলে তো থার্ড ইয়ারে পড়ে। হয়তো সিনিয়র ভাইয়ের কাছে পড়ালেখার ব্যাপারে কথা বলছিল।
পরদিন থেকে তার ডিপার্টমেন্ট এর প্রতি আমার ভালোবাসা বেড়ে গিয়েছে। প্রতিদিনই একবার তার ডিপার্টমেন্ট এর সামনে চক্কর দিয়ে আসি। কিন্তু তার সাথে আর দেখা হয় না। কিছুদিন হতাশ ছিলাম। যখনই সব কিছু জীবনে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছিল, তখনই আবারো ফার্স্ট ‘ল কাজ করলো। ঐদিন দুপুরে স্বপ্ন দেখলাম – ফেসবুকের সাজেশনে একটা আইডি পেলাম। আইডির নাম ক্যাকটাস। আর ছবি টাও ক্যাকটাসের। প্রোফাইলে ঢুকে দেখি, সে আর ঐ দিনের ছেলেটার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। ফেসবুকে তাদের একসাথে ছবি আর নাচের ভিডিও। হিন্দি গানের সাথে তারা নাচছে। এসব দেখে আমার চোখে পানি চলে আসছিল। ঐ ছেলে তো আরেক মেয়ের সাথে প্রেম করে। হঠাতই লাফ দিয়ে উঠলাম, বুঝতে পারলাম, যা দেখেছি তা সত্য না, সব স্বপ্ন।
উঠে দেখি আমার ভাগ্নি মোবাইলে ভিডিও করছে। জিজ্ঞেস করলাম, কি হচ্ছে! বললো – “তুমি ঘুমের মধ্যে চিল্লাচ্ছিলা, তাই ভিডিও করে রাখলাম। আমার সাথে কিছু উল্টা পালটা করলে আম্মুর আইডি থেকে এই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে দিবো”। সাথে সাথে ইউলিয়াম শেক্সপিয়রের উক্তি মনে পড়লো – WHEN SORROWS COME, THEY COME NOT SINGLE SPIES, BUT IN BATTALIONS. বুঝতে পারলাম, আমার সময় খারাপ যাচ্ছে, তাই সব কিছুই খারাপ হচ্ছে আমার সাথে।
আবার মনটা ভালোও হয়ে গেলো এই ভেবে যে – আজকে হয়তো ক্যাকটাসের সাথে দেখা হবে। যেদিনই তাঁকে স্বপ্নে দেখি, সেদিনই তার সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। ক্যাম্পাস থেকে বিকেলে ঘুরে আসলাম, অথচ তার সাথে দেখা হলো না। সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহুর্তে স্টাফ কোয়ার্টারে যাচ্ছিলাম, এক বন্ধুর বাসায়। স্টাফ কোয়ার্টারে রাস্তার সামনে দেখি সে ফুটবাল খেলছে এক কম বয়সী ছেলের সাথে। ছেলেটা ফারিন আপু বলে ডাকছিল। বুঝতে পারলাম, তার আসল নাম ‘ফারিন’, ছেলেটা হয়তো ছোট ভাই, আর তার বাসাও এখানেই। তখনই আমার বন্ধু, যার সাথে দেখা করতে আসলাম, সে পাশ থেকে এসে ডাক দিলো, একটা গালি দিয়ে সম্বোধন করলো আমাকে। তখন ফারিনও এদিকে তাকালো। আরেকবার আমি তার সামনে ইমেজ সংকটে পড়লাম। বার বার কেনো তার সামনে অপদস্থ হতে হয় আমার। নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে। এই ছেলে কি গালি দেয়ার আর জায়গা পেলো না!
চলবে...
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!