সর্বমোট ৫৮৩৪ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চান না ৫৬৮৩ জন অর্থাৎ ৯৭ ভাগ । ইন্সটিটিউশনাল মেইলে টেকনিক্যাল জটিলতার কারনে এখনো ভোট দিতে পারে নি অনেকেই।
এই নিয়ে আজকের প্রেস ব্রিফিং :
" বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাস এর পক্ষে আন্দোলনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচার ও আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিভিন্ন চেষ্টা দেখা গিয়েছে। শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত আমাদের দাবির বিপরীতে আমাদের বিভিন্ন হেনস্থা এবং প্রপাগান্ডার শিকার হতে হচ্ছে।
অতি সম্প্রতি আমরা জানতে পারি যে, ৩রা এপ্রিল ২০২৪ তারিখে বুয়েট ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থান স্পষ্টকরণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহাবস্থানের দাবিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সংগঠনটি বলছে, “ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি চর্চায় বিশ্বাসী। ছাত্রদল বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে।”
আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা, ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে চলমান আন্দোলনের এই সংকটপূর্ণ মূহুর্তে ছাত্রদলের এমন বক্তব্যকে সম্পুর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি এবং তাদের এই “রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট সংহতি”কে আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করছি।
২০২০ এর জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে ছাত্রদল যখন বুয়েটে তাদের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে তখনো আমাদের তৎকালীন অগ্রজ ব্যাচ “পৌনঃপুনিক ১৫” তাদের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে এবং ভিসি ও DSW স্যার বরাবর তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখনো এর প্রতিবাদ জানাই এবং সামনেও আমরা ক্যাম্পাসে সকল ধরনের ছাত্ররাজনীতি প্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখবো ।
পরবর্তীতে অন্য কোনো সংগঠনও যদি এমন বক্তব্য দিয়ে আমাদের আন্দোলন এর দাবি এবং অবস্থানকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় তবে আমরা তাদেরকেও প্রত্যাখ্যান করবো।
আমরা আবারো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, আমাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্রসংগঠন এর বিরুদ্ধে নয়। আমরা ছাত্ররাজনীতি-ই ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিরুদ্ধে, অতএব এটি করতে চায় এমন যেকোনো সংগঠনের বিরুদ্ধেই আমাদের অবস্থান সমান এবং অনড়। আরো উল্লেখ্য যে, হিজবুত তাহরীর এর মত নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বকেই আমরা সমর্থন করি না। সেখানে এরূপ নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন বা সহানুভূতি গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে সব দলের ও মতের লেজুড়বৃত্তিক সাংগঠনিক রাজনীতি এবং মৌলবাদী দলসমূহের বিপক্ষে আছি এবং থাকবো। আমাদের এই অবস্থান সকল দল ও মতের ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য । এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, বুয়েটে বর্তমানে কোন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনৈতিক দলেরই কার্যক্রম নেই । পাশাপাশি আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সোচ্চার ভূমিকার প্রতি সর্বদাই আস্থাশীল এবং সহযোগিতাপূর্ন।
যে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাস শতশত ছাত্রদের ভোগান্তি, আর্তনাদ অবশেষে সনি আপু, দ্বীপ ভাই এবং আবরার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি, কোনো রাজনৈতিক অপতৎপরতায় আমরা সেই অর্জন হারাতে রাজি নই।
তাই আমাদের বর্তমান আন্দোলনে হস্তক্ষেপ, অথবা আন্দোলনকে পুঁজি করে যেকোন স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা এবং একই সাথে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যেকোন সম্ভাব্য প্রচেষ্টাকে আমরা ধিক্কার জানাই।
আরেকটি বিষয় দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, ক্যাম্পাসে বর্তমানে, রাজনৈতিক মহল দ্বারা প্রভাবিত হাতেগোনা গুটিকতক বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থী, সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে। প্রমান ছাড়া এমন বানোয়াট অভিযোগেরও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আশা করছি, তারা ক্ষদ্র স্বার্থচিন্তা থেকে সরে এসে বৃহত্তর স্বার্থকে গ্রহন করে নিবে।
গত দুইদিন ব্যাপি, জনমত নিরীক্ষণের জন্য, আমরা আমাদের নিজ নিজ institutional mail এর ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করি।
যার ফলাফল হচ্ছে,
সর্বমোট ছাত্রসংখ্যা ৫৮৩৪ জন।
ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে সাক্ষর প্রদান করেছে, ৫৬৮৩ জন।
অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছে।
সুতরাং আমাদের অবস্থানের যথাযথতা এখানে প্রমানিত।"
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!