"সত্যে, সাম্যে, একতায়"

বুয়েটে চলমান নিরপদ ক্যাম্পাসের দাবি ও ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রেস রিলিজ






সম্প্রতি মিডিয়ায় বুয়েটের আন্দোলনরত বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা। আমরা আবারও সাফ জানিয়ে দিতে চাই আমাদের অবস্থান কেবল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নয়।


বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীরা যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকান্ডের বিরোধী। আর বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সেই জায়গা থেকে তাদের ক্যাম্পাসের ভিতরে রাজনৈতিক চর্চায় জড়িতদের বিরোধিতা করে আসছে। বুয়েটের বাইরে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে না বরং তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে ঐদিন রাতে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় নিয়ম অমান্য করে বুয়েটের ভিতরে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে অনুপ্রবেশ করে। ক্যাম্পাসে, হলে কিংবা ক্লাসে কারও উপর কোনো রকম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি, উক্ত অভিযোগ সম্পুর্ণরূপে মিথ্যাচার।


আমরা আমাদের ৬ দফা দাবির, প্রথম দাবিতে যার কথা উল্লেখ রয়েছে, ইমতিয়াজ রাব্বি, সে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদপ্রাপ্ত এবং ইতিপূর্বে সে তার পদ সরিয়ে নেয়ার কথা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করেনি। তার সোশ্যাল মিডিয়ায় সে এই পরিচয় ব্যবহার করে। সে এবং তদসংশ্লিষ্ট আরও ছাত্ররা যদি রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে পারে তাহলে অতিসত্বর বুয়েটে সম্পূর্ণ গতিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা কেবল সময়ের ব্যাপার- এ আশঙ্কা থেকেই এ আন্দোলন।


আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মনে প্রাণে ধারণ করি, জাতীয় দিনগুলোতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক উদযাপন ও অংশগ্রহণ এবং সম্যকভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিই এর প্রমাণ। এটি প্রমাণ করার জন্য আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর সিদ্ধান্তকে অবমাননা করে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করার প্রয়োজন নেই।


দ্বিতীয় যে আরেকটি ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আমরা যেমন সক্রিয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আমরা তেমন সক্রিয় নই। উল্লেখ্য, ছাত্রদল যখন ২০২১ সালে আহবায়ক কমিটি দেয় তখন তীব্র আন্দোলন হয়। কিন্তু সেই কমিটির সবাই প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিধায় কর্তৃপক্ষের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উপায় ছিল না। ওইসময় আমাদের তৎকালীন র‍্যাগব্যাচের অফিসিয়াল পেইজ থেকে দেয়া বিবৃতির প্রমাণও রয়েছে।


বর্তমানে হিজবুত তাহরীর নিয়ে কথা উঠেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল না বরং নিষিদ্ধ জংগী সংগঠন। এদের কর্মকান্ড আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পাই বহিরাগতদের (সিসি ফুটেজ অনুযায়ী) লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট না। আমাদের ইন্সটিটিউশনাল মেইলে হিজবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে সর্বপ্রথম ডিএসডাব্লিউ স্যারকে ভার্চুয়ালি এই মর্মে ইনফর্ম করা হয়, আমাদের আন্দোলনরত এ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই। এ ব্যাপারে ডিএসডাব্লিউ স্যারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ আহ্বান করা হয়। পরবর্তীতে ভিসি স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে স্যার জানান, এ ব্যাপারে বুয়েট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগেও বিগত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এদের বিরুদ্ধে পুলিশে অবহিত করার রেকর্ড আছে। আমরা হিজবুত তাহরীরের নিঃসন্দেহে সম্পূর্ণ বিপক্ষে এবং এ জাতীয় অপশক্তির উত্থান যেন বুয়েটে না হয় এজন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।


যেসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে অভিযোগ আসার সাথে সাথে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবার লিখিত ভাবে আহবান জানাই, এবং এটি আমাদের পূর্বের একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল। সে সময়ে ইন্টারভাল ১৮ এর ফেইসবুক সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেয়া হয় যা বুয়েট সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেইজ থেকেও প্রচার করা হয় । মাননীয় আদালতে বর্তমানে এই মামলাটি বিচারাধীন আছে এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি এরকম কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বহিষ্কার এর দাবি জানাবো।


এই প্রসংগে আমরা আহ্বান জানাবো ছাত্রশিবিরের সাবেক প্রেসিডেন্টকে, যিনি দাবি করেছেন উনাদের বুয়েটে কার্যক্রম আছে। তিনি যেন প্রমাণসহ বুয়েটে শিবিরে যুক্তদের তালিকা প্রকাশ করে। আমরা সেক্ষেত্রে তাদের তাৎক্ষণিক নিষিদ্ধ করার দাবি জানাবো।


সবশেষে আমরা বলতে চাই, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনৈতিক কর্মকান্ডের চর্চা নিষিদ্ধ। কমিটি দেয়া ছাড়াও ক্যাম্পাসে শোডাউন, রাজনৈতিক সংগঠনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ যেখানে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ সেখানে ৩টায় একটা রাজনৈতিক সংগঠনের নেতার দলেবলে প্রোগ্রাম করা অবশ্যই একটা অস্বাভাবিক ঘটনা এবং সাংগঠনিক রাজনীতির প্রভাবে ঘটা ঘটনা।


এখানে খুবই গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুয়েটের আভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে আমাদের স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে কখনোই সম্মান করে নাই, বরং ২০২২ সালে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা বুয়েটে সমাবেশ/মিছিল করে হামলার হুমকি দেয়।


এছাড়াও দফায় দফায় প্রতিবাদ জানানোর পরও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের ইচ্ছাকে সম্মান না করে বুয়েট ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে। ক্রমাগত অসন্তোষ এখন তীব্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে শুধুমাত্র একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাওয়ার দাবি থেকেই। তাই আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি ভুল প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য। আমরা শপথ করছি সকল রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখার। আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিব না।


তথ্যসূত্রঃ Interval 18


মন্তব্য করতে লগিন করুন
লগিন
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!
সম্পর্কিত
এখন থেকে বুয়েটে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরণের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রক্ষা, শিক্ষার মান … বিস্তারিত


ছাত্রলীগ নির্মমতার শিকার বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

শহীদ আবরার ফাহাদ কেবল বুয়েটিই নয় বরং গোটা বাংলাদেশের জন্য … বিস্তারিত


ফেরি ডিজাইনে বুয়েটের সাফল্যগাঁথা: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের জয়যাত্রা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন (WFSA) বিশ্বজুড়ে নিরাপদ ফেরির … বিস্তারিত


বুয়েটে ফের নিষিদ্ধ হলো লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি

২৮সেপ্টেম্বর, ২০২৪: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাডেমিক কাউন্সিল সম্প্রতি এক … বিস্তারিত


আবারো ক্লাস -পরীক্ষা বয়কটে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে আশানুরূপ‌ কোন তৎপরতা … বিস্তারিত