এ. এস. এম. আনাস ফেরদৌসের ব্যাপারে অরুণোদয় ১৮ ( বিএমই ১৮ ) র বিবৃতি :
আনাস বিএমই ১৮ ব্যাচের সাথে একই সময়ে বুয়েটে ক্লাস শুরু করে। কিন্তু শুরু থেকেই ওর বিহেভিয়ার ব্যাচের বাকি অনেকের কাছেই প্রবলেমেটিক লাগতে থাকে।
যেমন ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপে আলোচনার মাঝখানে আনাস এক মেয়ে সহপাঠীর মেসেজের রিপ্লাই এ বেশ আপত্তিকর একটা জোক করে বসে। যেটার জবাবদিহিতা চাইলে আনাস বলে যে জিনিস টা জোকই ছিল। ওর কাউকে আঘাত করার কোন উদ্দেশ্য ছিল না। সে ক্ষমাপ্রার্থী ইত্যাদি। ভুল স্বীকার করায় ওই বারের জন্য তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় গ্রুপ থেকে।
এরপরেও এরকম পদে পদেই আনাসের সাথে ক্লাসের বাকি সবার ঝামেলা বাঁধতে থাকে আর আমরা ওর এগেন্সটে ভার্বাল হয়ে উঠি বলে এক পর্যায়ে ও নিজে থেকে আমাদের মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ লিভ নেয়। এরপর অনেক পরে নিজে থেকে জয়েন দিলেও গ্রুপের কোন ব্যাপারে আনাস আর ইনভলভড থাকত না। একরকম সোশ্যাল আউটকাস্টের পার্টই ছিল সবসময়।
এখানে বলে রাখা ভাল, আনাস শুরু থেকে ক্লাসে মোটামুটি রেগুলার থাকলেও অনলাইন ক্লাসে এবং এর পর থেকে পুরোপুরি ইরেগুলার হয়ে পড়ে। অনলাইনে ল্যাবটেস্টের সময় অন্য একজন কে দিয়ে নিজের এক্সাম দেয়াতে গিয়ে একবার ধরাও পড়ে। এছাড়া ডিপার্টমেন্ট এর আরো অনেক কিছুতে আনাসের নিয়ম ভংগকারী আচার আচরণে আমাদের অনেক টিচারই প্রায় বিরক্ত।
এই বিভিন্ন ঘটনার মাঝেই আনাসের এক অনলাইন প্লাটফর্মের জন্ম হয়, যা মূলত স্কুল-কলেজ-অ্যাডমিশনের একটি এড-টেক প্লাটফর্ম হিসেবেই দেখানো হয়। কিন্তু এই প্লাটফর্মের প্রচারণার অংশ হিসেবে আনাসের অত্যন্ত বিতর্কিত কাজের অভিযোগ প্রায়ই পেয়ে থাকি আমরা । যার মধ্যে আমাদের ক্লাসের কয়েকজনের কাছে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া আইডি ব্যবহার করে রিচ বাড়ানোর জন্য টাকা অফার করা ইত্যাদি অন্তর্গত। আনাসের বিতর্কিত কাজের মধ্যে আরো রয়েছে বুয়েটের অন্য ডিপার্টমেন্ট গুলোকে ছোট করে অনলাইন কনটেন্ট বানানো, যেটার জন্য বিএমই ডিপার্টমেন্ট কে অন্যসকল ডিপার্টমেন্ট এর কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
ওর এরকম বির্তকিত কাজ কর্মের জন্য বিএমই র কোন ক্লাব / সোসাইটির অংশ হিসেবে আনাসকে নেয়া হয় না।একাডেমিক কাজের অংশ হিসেবেও বিভিন্ন গ্রুপ ওয়ার্কে সে টিম মেম্বারদের বিভিন্ন বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে। যেমন একটি হসপিটাল ভিজিটের সময় কাউকে না জানিয়ে সেখানকার কর্মচারীকে নিজে থেকে ঘুষ দিয়ে পরবর্তীতে টিম মেম্বারদের কাছে সেটা গর্বের বিষয় হিসাবে জাহির করতে চায়।
আনাসের বিভিন্ন কার্যক্রমের এথিক্যাল পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে সবসময়ই আনাস এর সাথে বিএমই ১৮ র সংঘর্ষ ছিল বিধায় বাকিরা তাকে বর্জন করে এসেছে। একাডেমিক কাজ যেহেতু ডিপার্টমেন্ট এর অধীনে, আর আনাস সর্বদাই বিভিন্নভাবে ক্ষমা আর মুচলেকা দিয়ে শক্ত কোন শাস্তির হাত থেকে পার পেয়ে যায়, তাই সে আমাদের সাথে ক্লাস-পরীক্ষা চালাতে থাকে। কিন্তু একেবারেই অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে এবং কয়েকটি কোর্সে তাকে পুনরায় অংশ নিতে হতে পারে । ৩-২ থেকে আনাস টার্ম ফাইনাল গুলোতেও অনিয়মিত হয়ে যায় বলে আমরা অবগত।
আনাস তার নিজস্ব পেজ থেকে এটা উল্লেখ করে যে ওইদিন রাতে সে কৌতুহলবশত ভিড় দেখে বুয়েটে প্রবেশ করে এবং BSL Academy নামে একটি অনলাইন প্লাটফর্মে ক্লাস নেয়ার কথা আলোচনা করার জন্য কিছু সময় থাকে। তবে এ ঘটনার কয়েকদিন আগে আনাস কে একটি ফেসবুক পেজের পোস্টে দেখা যায় যে সে BSL Academy তে ঢাবি ক ইউনিটের অ্যাডমিশন নিয়ে উপদেশ দেয়ার জন্য একটি পডকাস্টে অংশ নিচ্ছে।
এখন এখানে উদ্বিগ্নের বিষয় এটি যে সাম্প্রতিককালে আনাসের সাথে ছাত্ররাজনীতির জগতের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের চলাফেরা বাড়তে থাকে। এবং ২৮ মার্চ ভোররাতে যখন ক্যাম্পাসে বহিরাগত দের আগমন ঘটে, তখনই হঠাৎ আনাসের সেখানে উপস্থিতি এ ব্যাপারে চিন্তার উদ্রেক ঘটায় যে ভবিষ্যতে সে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির প্রসারে কোন ভূমিকা রাখতে পারে কিনা। একই সাথে আনাস এ ব্যাপারে অবগত থাকা সত্ত্বেও যে বুয়েটের অভ্যন্তরে সকল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের যেকোন ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ, বুয়েট ক্যাম্পাসে সেই মিটিং-গএ যে কারণেই হোক কিছুক্ষণ অবস্থান করে, এটাও বলা যায় যে সে বুয়েটের এই নিয়মটি ভংগ করেছে।
বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী হয়েও সে বুয়েটের সেফটি কোড ভংগ করে ও ফলশ্রুতিতে একটি গুরুতর অপরাধ করে সেই রাতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা, অরুণোদয় ১৮, আমাদের ডিপার্টমেন্ট হেড বরাবর একটি এপ্লিকেশন দেই এবং তার সাথে পারসোনালি যোগাযোগও করি যেন আনাস কে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তির অধীনে আনা হয়।
আমরা মনে করি, একটি অনলাইন প্লাটফর্ম এর কেউ বুয়েটে কোনভাবে ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে থাকলে, সে এর মধ্য দিয়ে বুয়েটের অন্যান্য অনেক শিক্ষার্থীকে ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে ম্যানিপুলেশনের একটি রাস্তা তৈরি করে দিতে পারে। আনাসের নিজস্ব অনলাইন প্লাটফর্ম টির মধ্য দিয়ে একটি বিরাট জনবল তার ফলোয়ার হিসেবে তৈরি হয়েছে যার মধ্যে বুয়েট এবং ভবিষ্যৎ বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও অনেকে আছে । এর সবাই এ ধরনের কাজকর্মে প্রভাবিত হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কাজকর্ম শুরু করতে পারে বলে উদ্বেগ পাওয়া যাচ্ছে।
সেজন্য আনাসের এ ধরনের কাজ কর্ম অবশ্যই একটি অশনিসংকেত বয়ে আনে আমাদের জন্য, আমাদের অনুজদের জন্য। সেফ ক্যাম্পাস চাওয়ার দাবীতে আমরা কখনোই আনাসের এহেন কাজ কে বরদাস্ত করতে পারি না।
আনাসের পূর্ববর্তী কাজগুলোর ব্যাপারে সবসময়েই লক্ষ্য করা গিয়েছে যে আনাস তার অপকর্ম গুলো খুব জাহির করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ও বাইরে ফলাও করে থাকে । ওর অপকর্ম, ওর এগেন্সটে করা কমপ্লেনগুলোকে ম্যানিপুলেট করে এগুলোর গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করে।
আনাসের সাথে বিএমই ১৮ ব্যাচের বেশিরভাগ মানুষের সাথে সোশ্যাল কোন কানেকশন না থাকা সত্ত্বেও আনাসের এসকল কাজকর্মের দায়ভার প্রায়শই ব্যাচমেট হিসেবে আমাদের জন্য অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্রেক করে এসেছে। আনাসের আরো কিছু অপকর্ম সাম্প্রতিককালে আলোচনায় এসেছে যেগুলি ওর ফ্যানবেজ কে, বিশেষত যুবসমাজ কে একটি অসুস্থ মানসিকতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এজন্য আমরা মনে করি আনাসের এহেন সকল কাজকর্মই সকলের সামনে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
যদিও বর্তমানে আনাস আমাদের সকল ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক গ্রুপ ইত্যাদি থেকে নিজেই বিরত আছে - তাও আমরা আনাস কে তার নিম্নস্তরের কাজের জন্য ব্যাচ এবং ব্যাচের সকল কার্যক্রম থেকে বয়কট ঘোষণা করলাম।
তাকে ভবিষ্যতেও বিএমই ডিপার্টমেন্ট এর কোন অনুষ্ঠানে যাতে অংশ নিতে দেয়া না হয় এ ব্যাপারে আমরা সচেতন থাকব এবং আমাদের জুনিয়র দেরো সচেতন করছি। আনাসকে অতি দ্রুতই প্রশাসন থেকে যথাযথ ব্যবস্থা প্রয়োগে শাস্তি প্রদান করা হবে বলে আমরা আশা করছি।
তথ্যসূত্রঃ অরুণোদয় ১৮
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!