"ছাত্ররাজনীতি বিরোধী আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অপপ্রচার এবং মিডিয়াতে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচারের প্রেক্ষিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থান:
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাস এর পক্ষে আন্দোলনরত সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীরা আজ ৩১ মার্চ,২০২৪ নিরাপত্তাজনিত তীব্র শঙ্কার কারণে কেউ কোনরুপ সমাগম করে নি। ক্যাম্পাসের আশপাশের সকল এলাকায় গতকাল রাত থেকে ক্রমাগত মাইকিং, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি ধামকি প্রদান করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানারকম গুজব, বুয়েট শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ছবি নাম পরিচয়সহ পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হয় এমন সকল অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এমতাবস্থায় বুয়েট ক্যাম্পাস এবং আশেপাশের এলাকা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এমনকি বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নিরাপত্তাজনিত এ সকল কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আজ ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেওয়া মানে এই নয় যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাস এর দাবি থেকে সরে এসেছে, এ দাবি বুয়েটের সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীর।
আজ ৩১ মার্চ,২০২৪ বুয়েট এর ২০ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল, উক্ত পরীক্ষায় ক্যাম্পাসে কোনোরুপ অবস্থান আন্দোলন ছাড়াই, কোনো বাধা ছাড়াই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ২ (দুই) জন বাদে সকল শিক্ষার্থীই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল। ১২১৫ জন ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১২১৩ জনই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ় তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
গতকাল ৩০ মার্চ, ২০২৪ বুয়েট ২২ ব্যাচ এর প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাতেও কোনো শিক্ষার্থীই অংশগ্রহণ করেনি অর্থাৎ শতভাগ অনুপস্থিত ছিল।
সম্প্রতি মিডিয়ায় বুয়েটের আন্দোলনরত বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আমরা আবারও সাফ জানিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের অবস্থান কোন একক ছাত্ররাজনীতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং বুয়েট ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের সকল ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছে যেখানে ক্ষমতাচর্চার লোভ লালসার শিকলে আবারো জিম্মি হয়ে যাবে না সকলের নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ। সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সকল উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ব্যতীতও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের বাৎসরিক ফেস্টিভ্যাল আয়োজন, প্রতিটি ডিপার্টেমেন্টের নিজস্ব সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং একাডেমিক অর্গানাইজেশন, সামাজিক উন্নয়ন মূলককাজ, বিভিন্ন ক্লাবের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে আনন্দের সাথে সম্পন্ন হচ্ছে। আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা চর্চা ব্যতীত বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সভা-সেমিনার আয়োজন, জাতীয় সহশিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জন সহ, ক্যাম্পাসের ভিতরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফলভাবেই সম্পূর্ণ সফলতার সাথেই আয়োজিত হয়েছে।
বর্তমান বুয়েটে শিক্ষার্থী বান্ধব পরিবেশ থাকায় নিজ নিজ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণামুখী কাজে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্নাতক পর্যায়ের শেষ বর্ষে গবেষণা নিয়ে থিসিস এর কাজ কারিকুলামে থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীরা গবেষণা মূলক কাজে যুক্ত হচ্ছে। একটি রাজনীতিবিহীন নিরাপদ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য সারাদেশ ব্যাপী জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং সমাদৃত হয়েছে। রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসের গত ৫ বছর এত সকল সফলতার পরেও ক্যাম্পাসকে নিয়ে নানা ধরণের অপবাদ দেওয়া কখনোই যৌক্তিক বলে মনে করে না বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
বুয়েটের সকল ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে দেশবাসীর সামনে একথা সৎ সাহসের সহিত সুস্পষ্টভাবে বলতে চায়, বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের এবং স্বাধীনতার চেতনায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে অঙ্গীকার এবং প্রচেষ্টা তার সাথে বুয়েটের সকল শিক্ষার্থীরাই তাদের একাত্মতা পোষণ করে এবং নিজেদের সুযোগ্য প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে তোলে তার জন্য অবদান রাখতে উদ্যমী। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না চাওয়া মানেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মতাদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়। আমরা শুধু চাই না, ক্ষমতার লোভ এবং অপচর্চা আবারো এসে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে না ফেলুক। আমরা সকল শিক্ষার্থীই গর্বের সহিত আমাদের দেশপ্রেম, স্বাধীনতার চেতনার চর্চা আমাদের অন্তরে লালন করি।
বর্তমানে হিজবুত তাহরীর নিয়ে কথা উঠেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল না বরং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। এদের কর্মকান্ড আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পাই বহিরাগতদের (সিসি ফুটেজ অনুযায়ী) লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট না। আমাদের ইন্সটিটিউশনাল মেইলে হিজবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে সর্বপ্রথম ডিএসডাব্লিউ স্যারকে ভার্চুয়ালি এই মর্মে ইনফর্ম করা হয়, আমাদের আন্দোলনরত এ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই। এ ব্যাপারে ডিএসডাব্লিউ স্যারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ আহ্বান করা হয়।
পরবর্তীতে ভিসি স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে স্যার জানান, এ ব্যাপারে বুয়েট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগেও বিগত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এদের বিরুদ্ধে পুলিশে অবহিত করার রেকর্ড আছে। আমরা হিজবুত তাহরীরের নিঃসন্দেহে সম্পূর্ণ বিপক্ষে এবং এ জাতীয় অপশক্তির উত্থান যেন বুয়েটে না হয় এজন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
যেসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে অভিযোগ আসার সাথে সাথে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবার লিখিত ভাবে আহবান জানাই, এবং এটি আমাদের পূর্বের একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল। সে সময়ে ইন্টারভাল ১৮ এর ফেইসবুক সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেয়া হয় যা বুয়েট সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেইজ থেকেও প্রচার করা হয় । মাননীয় আদালতে বর্তমানে এই মামলাটি বিচারাধীন আছে এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি এরকম কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায় আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বহিষ্কার এর দাবি জানাবো।
এই প্রসংগে অতি সম্প্রতি আমরা দেখতে পাই মিডিয়ায় ছাত্রশিবিরের সাবেক প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন উনাদের বুয়েটে কার্যক্রম আছে। কোনরূপ প্রমাণ ব্যতীত এই ধরনের বক্তব্যের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং একই সাথে যদি কারো শিবিরের কোন কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার যথাযথ প্রমান পাওয়া যায়- আমরা সেক্ষেত্রে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
সবশেষে আমরা বলতে চাই, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনৈতিক কর্মকান্ডের চর্চা, কমিটি দেয়া, ক্যাম্পাসে শোডাউন, রাজনৈতিক সংগঠনের জনসমাবেশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজনীতি মুক্ত রাখার বিধি লঙ্ঘন। এছাড়া রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ যেখানে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ সেখানে রাত ৩টায় একটা রাজনৈতিক সংগঠনের সাংগঠনিক নেতারা দলেবলে প্রোগ্রাম করা অবশ্যই একটা স্বাভাবিক ঘটনা না এবং সাংগঠনিক রাজনীতির প্রভাবে ঘটা ঘটনা।
এখানে খুবই গুরুত্বের সাথে উল্লেখ্য যে, ২০১৯ এর ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদ হত্যার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে বুয়েটের আভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে বুয়েটের স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে সম্মান করছে না।
এছাড়াও দফায় দফায় প্রতিবাদ জানানোর পরও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের ইচ্ছাকে সম্মান না করে বুয়েট ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে। ক্রমাগত অসন্তোষ এখন তীব্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে শুধুমাত্র একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাওয়ার দাবি থেকেই। তাই আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি ভুল প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য। আমরা শপথ করছি সকল রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখার। আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিব না।
আমাদের ক্যাম্পাসের রাজনীতিমুক্ত থাকা, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা শিক্ষার্থীরা পেলে আমরা সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে আমাদের একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরত যাবো। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের পরীক্ষাগুলো রিশিডিউল করার আবেদন জানিয়েছি।"
#BUET #bjs #BUETEvent #BUETIAN #BUETJournalistsCoverage #BUETCampus #BUETJournalistSociety #buet #BUETNews
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!