ছাত্ররাজনীতি বিরোধী আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অপপ্রচার এবং মিডিয়াতে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচারের প্রেক্ষিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিবৃতি:
“বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট”
সোর্স: প্রথম আলো
আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি।
বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদ ভাই এর হত্যাকাণ্ডের পর ৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩ টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, “অনেক প্রতিষ্ঠানেই তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের উপর” এরই ফলস্বরূপ, বুয়েটের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সকল প্রকার সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেন।
আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখব যে, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার আমাদের যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র্যাগিং কালচার কে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহার এর পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে তা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনে নি, আনবেও না। এর চরমতম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল’৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি আপু, যন্ত্রকৌশল’'০৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ ভাই এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল'১৭ এর আবরার ফাহাদ ভাইকে হারিয়েছি। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি৷
দেশ এবং বিদেশের নানাপ্রান্ত হতে আমাদের বুয়েটের এলামনাইরাও ইতিমধ্যে আমাদের ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার মতামতের সাথে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা আমাদের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন।
আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা এবং আস্থা রাখি৷ তাদের কাছ থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি, তারাই আমাদের প্রতিটি ক্লাসরুম প্রতিটি ল্যাবের নায়ক। প্রফেসর, এসোসিয়েট প্রফেসর, এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, লেকচারার যারাই আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, আমরা গত চার বছরে শিক্ষার্থীরা এমনটা কখনো অনুভব করিনি যে তারাও চান পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করে সেই অন্ধকার দিনগুলো ফিরে আসুক। তারা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি, এবং কখনোই চাইবেন ও না। তারা সবসময়ই আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিলেন। আজ এই প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বুয়েটের সকল শিক্ষকদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি তারা যাতে এমন সংকটের মূহুর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।
আমরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারের উপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। গত তিন দিন ব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে তিনি আমাদের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেন, বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাঙ্ক্ষা তা সকল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন।
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!