২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩...
লিবিয়ান আরব এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১৪ ত্রিপোলি থেকে বেনগাজি হয়ে কায়রোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। ফ্লাইটটি একটি রেগুলার শিডিউলের ফ্লাইট ছিলো, যা ক্রু সহ ১১৩ জন যাত্রী বহন করছিলো। বিমানটি ছিলো Boeing 727-200 প্যাসেঞ্জার জেট, পাইলট ছিলো ফ্রেঞ্চ নাগরিক। তো ফ্লাইটটি রেগুলার পাথ অনুযায়ী বেনগাজি পৌঁছালো এবং সেখানে ল্যান্ড করলো। এরপর ফ্লাইটটি বেনগাজি থেকে টেক অফ করলো কায়রোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু টেক অফের কিছুক্ষণ পর কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে ফ্লাইট ১১৪ এর যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেলো খারাপ আবহাওয়া এবং কিছু যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে।
ফ্লাইটটি এর যাত্রাপথ থেকে সরে গিয়ে অন্য দিকে চলতে শুরু করে। কারণ ছিলো তীব্র বাতাস এবং বালুঝড়ের কারণে ক্রুরা সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়। যেহেতু বিমানটিতে কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গিয়েছিলো আগেই, তাই তখন ন্যাভিগেশনের ভুলটাও ধরা পড়েনি তাৎক্ষণিকভাবে। যার ফলে ফ্লাইটটি ভুল পথ ধরে ই স রা ই ল নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমায় সিনাই উপদ্বীপের উপর দিয়ে উড়তে শুরু করে। এসময়ের মধ্যেই মিশরীয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের রাডার থেকে ফ্লাইটটি হারিয়ে যায়। কিন্তু ফ্লাইটে পাইলট এবং ক্রুরা তখন আন্দাজ করেছিলেন তাদের গন্তব্যের কাছেই এসে গেছেন, তাই ফ্লাইটটি ল্যান্ড করার উদ্দেশ্যে ডিসেন্ড করতে শুরু করে।
দুপুর ১.৫৫ মিনিটে ফ্লাইটটি সুয়েজ খালের দক্ষিণ পূর্ব দিকে ১৫০০০ ফুট উচ্চতায় ই স রা ই ল এর রাডারে ধরা পড়ে। যেহেতু যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিলো না তাই ইসরাইলি এয়ার ফোর্সের দুটি F-4 Phantom ফাইটারকে অজানা এয়ারক্রাফটটি ইন্টারসেপ্ট করতে পাঠানো হয়। ফ্লাইট ১১৪ এর ক্রুরা প্রথমে ফ্যান্টমকে মিশরীয় MiG-21 ভেবে ভুল করেন এবং মিশরের আকাশসীমায় আছেন বলেই ভাবেন, তারা তাই তাদের পথ অনুযায়ী চলতে থাকেন। তখন ফাইটার পাইলটরা ফ্লাইট ১১৪ এর পাইলটের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে, যেহেতু যান্ত্রিক ত্রুটি ছিলো তাই ইশারার মাধ্যমে তাদের ল্যান্ড করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বালুঝড়ের কারণে ফ্লাইট ১১৪ এর ক্রুরা হয়তো বুঝতে ভুল করেন এবং আবারও দিক পরিবর্তন করে উড়তে থাকেন। তখন ইসরাইল থেকে ফাইটার পাইলটদের বিমানটিকে শুটডাউন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফ্যান্টমের M61 অটোক্যানোন থেকে ফ্লাইট ১১৪ এর দিকে ব্রাশ ফায়ার করা হয়। যার ফলে বুলেটের আঘাতে ফ্লাইট ১১৪ এর কন্ট্রোল সারফেস, হাইড্রোলিক সিস্টেম, উইং স্ট্রাকচার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এর ফলে বিমানটি দ্রুততার সাথে উচ্চতা হারাতে শুরু করে, তাই পাইলটরা ইমারজেন্সি ল্যান্ডিং এর সিদ্ধান্ত নেন তাৎক্ষণিকভাবে। কিন্তু মরুভূমির মধ্যে ল্যান্ডিং করা নিতান্তই অসম্ভব। ফ্লাইট ১১৪ এর উচ্চতা কমতে কমতে একসময় একটি বালিয়াড়িতে ধাক্কা খায়। বিমানটি লাফিয়ে উঠে এবং এর ডানার অংশ মূল ফিউসিলাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিমানটির বাকি কাঠামো বালির খাদের মধ্যে ধ্বংসাবস্থায় আটকে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর যখন ক্র্যাশ সাইটে ই স রা ই লি সেনারা আসে, তখনও জলন্ত ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ১৩ জন যাত্রী জীবিত ছিল । তবে শেষপর্যন্ত তাদের মধ্যে ৫ জন বেঁচে ছিলেন ,যার ফলে ক্রু সহ ফ্লাইট ১১৪ এর মোট ১০৮ জন নিহত হন।
পরবর্তীতে উভয়পক্ষের ভিন্নধর্মী বক্তব্য সামনে আসে। লিবিয়ার বক্তব্য অনুসারে বলা হয় কোনো ওয়ার্নিং ছাড়াই ফ্লাইট ১১৪ কে উদ্দেশ্যমুলক ভাবে শুটডাউন করা হয়েছে। ই স রা ই লি এয়ারফোর্স একে সম্ভাব্য হুমকি বলে আখ্যায়িত করে, এবং বিবৃতি দেয় যেহেতু নির্দেশনা অমান্য করে ল্যান্ড করা থেকে বিরত ছিলো ফ্লাইট ১১৪ তাই একে শুটডাউন করা হয়। এছাড়াও এয়ারক্রাফটটি গুপ্তচরবৃত্তির জন্য পাঠানো হয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহকরে তারা। এ বিষয়ে তাদের যুক্তি ছিলো বিশেষ নিরাপত্তা বিষয়ক হুমকিস্বরূপ, যেহেতু কাছেই তাদের একটি এয়ারবেস ছিলো এবং পাইলটদের অস্বাভাবিক আচরণ। তবে বিভিন্ন দেশ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়, যদিও আমেরিকা চুপ ছিল। পরে আদালতের মাধ্যমে ঘটনার বিচার হয়। একেও ই স রা ই ল ভুল বিচার দাবি করে এবং ই স রা ই ল কে ফ্লাইট ১১৪ এর সকল ভিক্টিমকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!