"সত্যে, সাম্যে, একতায়"

ড. মোঃ কামরুল ইসলাম -ইমেরিটাস অধ্যাপক, যন্ত্রকৌশল অনুষদ






মোঃ কামরুল ইসলাম (১৯৫০- ২০ জানুয়ারী ২০২৪) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একজন প্রাক্তন ছাত্র, অধ্যাপক এবং একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৭৬ সালে বুয়েটে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেন এবং ২০১১ সালে বুয়েটের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন । অধ্যাপক জীবনে তিনি ফ্লুইড মেকানিক্স, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং হাইড্রোলিক মেকানিক্স এর ওপর দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন সুনামধন্য সাইন্টিফিক জার্নালে ২৩০ টির ও অধিক রিচার্স পেপার পাবলিশ সহ যন্ত্রকৌশল-এর ওপর ১৪ টি বই লিখেন।


ড. মোঃ কামরুল ইসলাম ২০১৬ সালে বুয়েট থেকে অবসর গ্রহণ করে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ইমিরিটাস প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ২১শে জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন।


জন্ম ও শিক্ষাজীবন


মোঃ কামরুল ইসলাম ১৯৫০ সালে ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজের একজন প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন এবং ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যন্ত্রকৌশল বিষয়ে বি. এসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, এসসি এবং ১৯৮৬ সালে বেলজিয়ামের ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরে আসেন। শিক্ষা জীবনে তাঁর নবায়নযোগ্য শক্তি ও মেকানিক্স এর উপর ছিল অসীম আগ্রহ।


কর্মজীবন


মোঃ কামরুল ইসলাম বুয়েট হতে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে কয়েকবছর তেজগাঁয়ে টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজে লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৫ সালে এমএসসি শেষ করেন এবং ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যাপক হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্ব ও প্রতিভাবান। তিনি ২০০২-২০০৪ সাল পর্যন্ত যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন এবং ২০০৪-২০০৬ সাল পর্যন্ত উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি ২০১১ সালে বুয়েট থেকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ড. রশীদ গোল্ড মেডেল লাভ করেন।


তিনি বিভিন্ন সুনামধন্য জার্নালে একক ও যৌথভাবে শতাধিক পেপার পাবলিশ করেন। লেখা লিখিতেও কামরুল ইসলামের ছিল অবাধ বিচরণ। তিনি ২০০৬ সালে লেখক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক লাভ করেন।


তিনি তার দ্বিতীয় প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের কাছেও তুমুল জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন ডঃ মোঃ কামরুল ইসলাম স্যার। ফ্লুইড মেকানিক্সের মত বিষয়কে তিনি সহজ ও সাবলীল ভাবে পড়াতেন। যন্ত্রকৌশল বিভাগের সকল সম্মানিত শিক্ষকগনই ছিলেন স্যারের সরাসরি ছাত্র।এমনকি বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভিন্ন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টসহ, সকলের সাথে তার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। তিনি যন্ত্রকৌশল বিভাগের সম্মানিত প্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম।


কামরুল ইসলাম ২০১৬ সালে বুয়েট থেকে অবসর গ্রহণ করে। এরপর ঢাকাস্থ মিরপুর সেনানিবাসের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং একইসাথে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন।


ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন


তাঁর সহধর্মিণী ড. রোকসানা পারভিন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। মোঃ কামরুল ইসলামের দুইজন কন্যা সন্তান রয়েছেন। তাঁর জামাতা, ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান, বর্তমানে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল অনুষদের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত আছেন।


গ্রন্থাবলী


ড. মোঃ কামরুল ইসলাম ছাত্রজীবন থেকে শুরু ক্ক্রে বুয়েটে চাকরি জীবন, তারপর, অবসর নেয়া পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেছেন তার লেখা "বুয়েটের স্মৃতি " নামক বইয়ে। এছাড়াও যন্ত্রকৌশলের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে বই প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলোর একাধিক বই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।


প্রকাশিত বইয়ের তালিকাঃ


"ফ্লুইড মেকানিক্স", (জুন ১৯৮৯), বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত।


"ফ্লুইড মেকানিক্স ল্যাবরেটরি প্র্যাকটিস" ( জুলাই ১৯৯৩) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত।


"মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অঙ্কন", (২০০৮), বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত।


"ফ্লুইড মেকানিক্সে সমস্যার সমাধান",(জুন ১৯৮৯), বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত।


"পেট্রোলিয়াম জিওলজি এবং ড্রিলিং এর ভূমিকা" (১৯৯৪) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত।


"হাইড্রলিক মেকানিক্স",(১৯৯৫) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত।


"হাইড্রোলিক মেশিনস থ্রু ওয়ার্কড আউট প্রবলেম",( ১৯৯৮) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত।


"মেকানিক্স অফ ম্যাটেরিয়ালস ল্যাবরেটরি প্র্যাকটিস",( ১৯৯৯) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত।


"বায়ু টারবাইনগুলির বায়ুগতিবিদ্যা এবং নকশা", (২০০১) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত।


"ফ্লুইড মেকানিক্স থ্রু ওয়ার্কড আউট প্রবলেম", (জুন, ২০০৬) ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (IUT) দ্বারা প্রকাশিত।


"মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং",( মার্চ, ২০০৭) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা প্রকাশিত।


পুরস্কার ও সম্মাননা


তিনি ২০০২-২০০৪ সাল পর্যন্ত যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন এবং ২০০৪-২০০৬ সাল পর্যন্ত উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন।


মোঃ কামরুল ইসলামকে ২০১১ সালে বুয়েট থেকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে মনোনীত করা হয় এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ড. রশীদ গোল্ড মেডেল লাভ করেন। তিনি আমৃত্যু বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ইমিরিটাস প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।


তিনি ২০০৬ সালে লেখক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক লাভ করেন।


মৃত্যু


ড. মোঃ কামরুল ইসলাম ২০২৪ সালের ২০শে জানুয়ারী শনিবার রাতে ৭৪ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। বুয়েটের নিকটস্ত আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।


মন্তব্য করতে লগিন করুন
লগিন
মন্তব্যসমূহঃ

avatar
▶ Hasibul Islam • hasiee8004@gmail.comJan. 29, 2024, 9:57 p.m.

We will miss you, sir! ❤️

সম্পর্কিত
এখন থেকে বুয়েটে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরণের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রক্ষা, শিক্ষার মান … বিস্তারিত


ছাত্রলীগ নির্মমতার শিকার বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ এর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

শহীদ আবরার ফাহাদ কেবল বুয়েটিই নয় বরং গোটা বাংলাদেশের জন্য … বিস্তারিত


ফেরি ডিজাইনে বুয়েটের সাফল্যগাঁথা: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের জয়যাত্রা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফেরি সেফটি অ্যাসোসিয়েশন (WFSA) বিশ্বজুড়ে নিরাপদ ফেরির … বিস্তারিত


বুয়েটে ফের নিষিদ্ধ হলো লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি

২৮সেপ্টেম্বর, ২০২৪: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাডেমিক কাউন্সিল সম্প্রতি এক … বিস্তারিত


আবারো ক্লাস -পরীক্ষা বয়কটে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে আশানুরূপ‌ কোন তৎপরতা … বিস্তারিত