বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) বাংলাদেশে প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশুনা ও দক্ষ জনশক্তির যোগানের অগ্রদূত। বাটখারার একপাশটা যখন বুয়েট তার একাডেমিক সহায়তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে যাচ্ছে,অন্যপাশটায় ক্যাফেটেরিয়ার নিম্নমানের খাবার শিক্ষার্থীদের বিষিয়ে তুলছে।
বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের নিম্নমান নিয়ে সন্তুষ্ট নয় শিক্ষার্থীরা।পূর্বে এ বিষয়টি নিয়ে অনেকবার জল ঘোলা করা হলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি ; বরং ক্যাফেটেরিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মচারী এমনভাবে এটিকে পরিচালনা করছে যেন এদের দেখভালের কেউ নেই।অথচ হওয়া উচিত ছিল এর বিপরীত।
ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরা হলো।
দ্রষ্টব্য ১ : খাবারের অসংগতি
১.দরজা দিয়ে ঢুকে বামপাশেই ভারি খাবারের পশরা।ফ্রাইড রাইস,খিচুড়ি, মুরগীর মাংস আরো বেশ কিছু।সেখানে গিয়ে বেশিরভাগ খাবারের পাত্র খোলা অবস্থায় লক্ষ্য করা যায়।সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা এভাবে বলেন, 'একটু পরেই তো সবাই আইস্যা (এসে) ভীড় করব।তখন তো ঢাকনা সরাইবার(সরানোর) টাইম পাওয়া যাইবনা।তাই এভাবে খোলাই রাখি।' প্রতুত্তরে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন করলে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
২. ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বার্গার।সেই বার্গারের ভেতর ডালের বরা ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৩. মেনুতে নাম চিকেন স্যান্ডউইচ। অথচ এই চিকেন স্যান্ডউইচ এর নামে বিক্রি করা হচ্ছে মেয়োনিজ-ময় রুটি।পাতলা ২ স্লাইস রুটির মধ্যে মেয়োনিজ দিয়ে দিব্যি ৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে এটিকে।এ বিষয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে স্বীকার করেন যে,এই স্যান্ডউইচ গুলো বাইরে থেকে কিনে এনে কিঞ্চিৎ লাভ রেখে বিক্রি করা হয়।এ বিষয়ে একজন শিক্ষার্থী বলেন “তাদের অনেক লোকবল আছে। সদিচ্ছা থাকলে, তারাই সব বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন। তাহলে আর আমাদের স্যান্ডউইচ এর নামে মেয়োনিজ খেতে হবেনা।বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
৪.টেবিলগুলোতে সবসময় খাবারের পর্যাপ্ত পানি থাকেনা।
৫. ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চিকেন শর্মা।সেই শর্মাতে চিকেনের পরিমাণের চাইতে শশার পরিমাণ এতটাই বেশি যে এটিকে শশা শর্মা বললে খুব একটা ক্ষতি হবেনা।
৬. ইসিই তে কিমা পরোটার নামে বিক্রি হচ্ছে পিঁয়াজ এর রুটি ।খাবারের টেস্ট ও অত্যন্ত বাজে।
৭.তারা যে সবজি রোল বিক্রি করেন সেটার প্রস্তুতপ্রণালী এবং উপকরণসমূহ চিন্তা করলে সর্বোচ্চ দাম ২০ টাকা হতে পারে,৩০ টাকা কোনভাবেই নয়।কিছু কিছু শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে 'তারা বাসি খাবার সরবরাহ করে' এমন অভিযোগ ও উঠে এসেছে।
৮.বেশ কিছু সিনিয়রদের সাথে সাক্ষাৎকারে জানা যায়,পূর্বে ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের ভিন্নতা ছিল।এখন সেটিও কমে গিয়েছে। আরো বেশ কিছু খাবার যেন শিক্ষার্থীদের নাগালের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করা হয়,সেদিকেও নজর দেওয়া উচিত।
দ্রষ্টব্য ২ : রান্নাঘরের অসংগতি
১.শিক্ষার্থীদের একাংশ সকালে নাস্তা হিসেবে পরোটা খেয়ে থাকেন।সেই পরোটা ভাজার পর অবস্থান যদি নিচের ছবির মতো হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
২.অনেকেই খিচুড়ি, পরোটার সাথে ওমলেট খেয়ে থাকি।নিচের ছবিতে খেয়াল করলে দেখবেন ডিম ভেঙে ধনিয়া পাতা দিয়ে প্রস্তুত করে রাখা,তার উপরে একটা টিনের বাটি।সম্ভবত সেই বাটি দিয়ে তারা পরিমাণ মত ডিম তুলে ওমলেট বানান এবং আমরা শিক্ষার্থীরা তা খেয়ে থাকি।
৩.ফ্রিজের ভেতরে অবস্থা কি বেগতিক।মনে হচ্ছে কয়েকমাস ফ্রিজ পরিষ্কার করা হয়নি,তাই বরফ জমে গিয়েছে।এ ফ্রিজে হয়ত কিছু কিছু খাবার সংরক্ষণ ও করে রাখা হয়।
৪.রান্নাঘরের টেবিলটা দেখে ২০ বছরের পুরনো মনে হয়।ধোঁয়ায় এতটা কালো হয়ে গিয়েছে।অথচ এর উপরে কোন পলিথিন ব্যবহার না করেই আলু,বেগুন ,পেঁয়াজ,মরিচ কাটা হচ্ছিল।
সর্বোপরি, ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়ন ও সহনীয় মাত্রায় সঠিক মূল্যতালিকা প্রনয়নের তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সাশ্রয়ের জন্যেই ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারগুলো খেয়ে থাকে।দাম বেড়ে যাওয়ার জন্যে অনেকেই সেখানে যেতে না পেরে হলের ক্যান্টিনগুলোয় ভীড় জমাচ্ছে যেখানে খাবারের ভিন্নতা নেই বললেই চলে।দুইটা টাকার বিনিময়ে ভালো খাবার যেন দেওয়া হয়,তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে যেন তারা সচেতন হয়,তারা যেন বলতে না পারে টাকা দিয়ে কি খেলাম- এসব কিছুর জন্য বুয়েটের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে শিক্ষার্থীরা । সেই সাথে, খাবার রান্না থেকে পরিবেশন পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে যাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে সব কিছু করা হয়, তারই দাবি বুয়েট শিক্ষার্থীদের।
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!