ট্রফিজয়ের হ্যাটট্রিক হতে মাত্র একটা জয় দূরে ছিল কাজী নজরুল ইসলাম হল। কিন্তু সেই জয়টা আর এলো না। ফাইনালে শহীদ স্মৃতি হলের বিপক্ষে পরাজিত হয়ে পুড়তে হলো স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়, আর মুদ্রার উল্টো পিঠে, অনেক বছর পর বুয়েটের বিশ্বকাপটা গেল শহীদ স্মৃতি হলের ট্রফি ক্যাবিনেটে।
গতকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে অনুষ্ঠিত আন্তঃহল ফুটবল প্রতিযোগিতা-২০২৩ এর ফাইনালে কাজী নজরুল ইসলাম হলকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে শহীদ স্মৃতি হল। তিনটা করে গোল করে যৌথভাবে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পান তিতুমীর হলের আনোয়ার এবং আহসানউল্লাহ হলের মধুপম। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন শহীদ স্মৃতি হলের মোহাম্মদ তূনীড়। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ডঃ আব্দুল জব্বার খাঁন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ডঃ মোঃ মিজানুর রহমান। উল্লেখ্য যে, সাতটি হলের অংশগ্রহণে ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের দুই গ্রুপের সেরা চারটি দল উন্নীত হয় সেমিফাইনালে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তিতুমীর হলকে পরাজিত করে নজরুল হল, অপরদিকে শহীদ স্মৃতি হলের কাছে হেরে বিদায় নেয় আহসানউল্লাহ হল।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলের আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ চলতে থাকে। এরই মধ্যে, প্রথমার্ধেই মাহমুদুল হাসান তন্ময়ের বাড়িয়ে দেওয়া বলে নজরুল হলের গোলরক্ষককে পরাস্ত করে শহীদ স্মৃতি হলকে এগিয়ে নেন মোহাম্মদ সোয়াদ সাত্তার। পিছিয়ে পড়েও হাল ছেড়ে দেয়নি নজরুল হল, তবে স্মৃতি হলের গোছানো ফুটবল আর দারুণ পরিকল্পনার সামনে সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয় তাদের। ম্যাচে সমতা ফেরানোর আগেই রেফারির শেষ বাঁশি বেজে যায়, আর তাতেই নিশ্চিত হয়, এই টুর্নামেন্টটা নজরুল হলের হ্যাটট্রিক নয়, বরং থাকবে স্মৃতি হলের শিরোপাখরা কাটানোর টুর্নামেন্ট হয়ে।
বিজয়ী অধিনায়ক ইশমাম আসিফ অবশ্য জয়ের কৃতিত্বটা ভাগ করে দিচ্ছেন পুরো দলের মধ্যে। টুর্নামেন্টের আগে দলীয় অনুশীলন আর ম্যাচের আগের টিম মিটিংয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা দলীয় সমন্বয়ই তাঁর দৃষ্টিতে ছিল সাফল্যের মূল নিয়ামক। ম্যাচের জন্য খেলোয়াড়দের ত্যাগ স্বীকারকেও ভোলেননি তিনি, পাশাপাশি ফাইনালের প্রতিপক্ষ নজরুল হলের প্রতিও ছিল তাঁর অকুণ্ঠ সম্মান।
তবে এর পাশাপাশি নিজেদের ফিটনেসকেও বিশেষ কৃতিত্ব দিলেন শহীদ স্মৃতি হলের মাহমুদুল হাসান তন্ময়, গত দুইবার নজরুল হলের হয়ে শিরোপা জেতার পর এবার যিনি শিরোপা জিতলেন শহীদ স্মৃতি হলের হয়ে। নিজেদের অভিজ্ঞতা আর দলীয় সমন্বয়ের পাশাপাশি প্রতিপক্ষদের নিয়ে পর্যাপ্ত কাটাছেঁড়া করাকেও তিনি চিহ্নিত করছেন শিরোপা জয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে।
অপরদিকে পরাজয়ের জন্য নিজেদের অনভিজ্ঞতাকেই খানিকটা দায়ী করছেন নজরুল হলের অধিনায়ক মোহাম্মদ হাসনাত জামিল। গত দুবারের শিরোপাজয়ী দলের মূল মেরুদণ্ড যাঁরা ছিলেন, সেই মিডফিল্ডার-স্ট্রাইকার-রাইট উইঙ্গারদের অনুপস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত নতুন দল নিয়েও নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দেওয়াটাই তাঁর কাছে থাকছে মূল প্রাপ্তির জায়গা হয়ে। তবে হ্যাটট্রিক না হওয়ার আক্ষেপ থাকলেও, তাঁর চোখে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। চাইছেন, এই দলটাই যেন জয়ের মালা পরতে পারে পরের টুর্নামেন্টে।
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!