১৯৮৯ সালের ৪ জুলাই, সূর্য ঠিক মাথার ওপর থেকে পশ্চিমে হেলতে শুরু করেছে তখন.....
সোভিয়েত বিমান বাহিনীর একটি MiG-23M ফাইটার জেট ইন্টারসেপ্ট ট্রেইনিং মিশনের জন্য পোল্যান্ডের বাজিচ্ এয়ারবেস থেকে টেকঅফ করল। ককপিটে আছেন কর্নেল নিকোলাই স্কুরিজিন। ফাইটারটিতে কোনো মিসাইল না থাকলেও মেইন গানে ২০০ রাউন্ড এবং ফুয়েল ট্যাংক ফুল লোড করা আছে। কিন্তু টেকঅফের কিছুক্ষণ পর কোনো কারণে আফটারবার্নার বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি আয়নায় পেছন থেকে ধোঁয়া ওঠা দেখতে পান। সেই সাথে ফাইটারটি ডিসেন্ডও করতে থাকে। তাই তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই ইজেক্ট করে বের হয়ে আসেন। তিনি ভেবেছিলেন ফাইটারটি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ক্র্যাশ করতে চলেছে। ক্যানোপি আর ইজেকশন সিট আলাদা হয়ে যাওয়ায় ফাইটারের ভরকেন্দ্র হঠাৎ পেছন দিকে চলে আসে এবং এর নোজ উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে এটি আবার ক্লাইম্ব করতে শুরু করে ইঞ্জিনের RPS এ; "George was still flying the plane" ; এভাবে ফাইটারটি ক্লাইম্ব করতে থাকে এবং পোল্যান্ডের আকাশসীমা পার করে পূর্ব জার্মানি, এরপর পশ্চিম জার্মানির আকাশসীমায় উড়তে থাকে।
এদিকে নেদারল্যান্ডসের সোয়েস্টারবার্গ এয়ারবেসে থাকা আমেরিকান ফাইটার স্কোয়াড্রনের ক্রুরা স্বাধীনতা দিবসের ছুটি পালন করছে। এয়ারবেসের মাঠে আতশবাজি, স্টেক, শ্যাম্পেন আর বেসবল ম্যাচের মাধ্যমে স্বাধীনতা উদযাপন করছে মার্কিন পাইলট, গ্রাউন্ড ক্রুরা। এরইমধ্যে হঠাৎ সাইরেন বেজে উঠল কোনো অজানা এয়ারক্রাফট পশ্চিমা আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে স্ট্যান্ডবাই থাকা 32th TFS (Tactical Fighter Squadron) এর দুটি F-15 Eagle ফাইটার জেট স্ক্র্যাম্বল করল অজানা এয়ারক্রাফটটিকে ইন্টারসেপ্ট করার জন্য। ৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় ওঠার পর তারা দেখতে পেল দিগন্ত সীমায় একটি সোভিয়েত MiG-23 "Flogger" বেশ ধীরগতিতে উড়ছে। প্রথমে তারা অবাক হলো এটা কিভাবে এখানে আসলো, কারণ সোভিয়েতরা জেনে বুঝে এদিকে আসা মানেই পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মতো! তারপর আবার সিঙ্গেল ইউনিট আর এর এমন অস্বাভাবিক গতিপথ দেখে আরও অবাক হওয়ার মতো।
" Sir, we've intercepted a MiG-23 Flogger"
গ্রাউন্ড কন্ট্রোলকে জানানোর পর নির্দেশ দেওয়া হলো ফাইটারটিকে নিকটস্থ একটি জার্মান এয়ারবেসে ল্যান্ড করানোর জন্য। তারা রেডিওতে পাইলটের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কোনো রেসপন্স পেলেন না। তাই তারা সামনে এগিয়ে মিগের দুই পাশে অবস্থান নিলেন সংকেতের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে, যেমনটা Bangladesh Air Force এর অনির্বাণ Rise of the Eagle এ দেখা যায়। কিন্তু তারা যা দেখলেন তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তারা দেখতে পেলেন ক্যানোপি ছাড়া, সিট ছাড়া, পাইলট ছাড়া ফাইটারটি একাই উড়ছে। ঈগলের পাইলটরা রীতিমতো হকচকিয়ে গেলেন!
" Sir, we've got a problem here" " What problem!" " You guys won't believe what we're seeing here. There is no pilot in the bogey" " Say again" " Sir I repeat , THERE IS NO PILOT IN THE BOGEY!!!"
বেশ কয়েকবার বলার পর গ্রাউন্ড কন্ট্রোলারকে কোনোভাবে বিষয়টা বোঝানো সম্ভব হয়, যদিও মূল বিষয় সবারই অজানা। গ্রাউন্ড কন্ট্রোল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হলো এর সাথেই থাকতে। কিছুক্ষণ পর ঈগলের পাইলটরা লক্ষ্য করলেন মিগ ডিসেন্ড করা শুরু করেছে, অর্থাৎ এর জ্বালানি শেষ হয়ে এসেছে। তারা বুঝতে পারলেন এটা এবার ক্র্যাশ করতে চলেছে। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হলো টার্গেট লক রাখতে এবং সুযোগ পেলে মিসাইল ফায়ার করে আকাশেই একে ধ্বংস করে দিতে। তবে বিবেচনায় রাখতে হবে গ্রাউন্ড এরিয়া। তারা দেখলেন মিগটি মোটামুটি জনশূন্য এলাকায় ক্র্যাশ করতে যাচ্ছে, তাই আর শুট করার রিস্ক নিলেন না। ততক্ষণে ফ্রান্সের আকাশ পেরিয়ে বেলজিয়ামের আকাশে ঢুকে গেছে তারা। অবশেষে মিগটি একটা ফসল ক্ষেতের পাশে একটা ঘরের উপর ক্র্যাশ করে, ঘরে থাকা একজন যুবক এতে নিহত হন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বেলজিয়াম থেকে সোভিয়েতের বিপক্ষে উপযুক্ত তথ্য সরবরাহ না করার জন্য দোষারোপ করা হয় এবং বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর জন্য নিন্দা জানানো হয়। যদিও মিগের পাইলট পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায় এবং বলে এমন জানলে উনি কখনোই ইজেক্টই করতেন না!!
যাই হোক, এভাবে পাইলট ছাড়াই এয়ারক্রাফটটি ৯০০ কিলোমিটারের বেশি দুরত্ব অতিক্রম করে, মাঝে চারটি দেশের সীমানা অতিক্রম করে একজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ঘটনাটি ( কিংবা দূর্ঘটনা) শেষ হয়। এর থেকে আরও একটি বিষয় উপলব্ধি করা যায়, মৃত্যু থাকলে সেটা যেকোনো অবাঞ্ছিত ভাবেই হতে পারে। যুবকটি হয়তো কল্পনাও করেনি নয়শো কিলোমিটার দূর থেকে একটা পাইলটবিহীন ভিনদেশী ফাইটারের ক্র্যাশে তার মৃত্যু হতে পারে! Irony of Life!
References-
1. https://www.nytimes.com/1989/07/06/world/belgians-protest-to-soviets-over-crash-of-derelict-mig.html
2. https://www.warhistoryonline.com/war-articles/the-mig-23-that-flew-for-900km-without-pilot-thencrashed-in-a-farm-killing-a-boy.html
3. https://theaviationgeekclub.com/that-time-two-usaf-f-15s-intercepted-a-pilotless-soviet-mig-23-in-german-airspace-the-story-of-the-fourth-of-july-alpha-scramble/
এখনো কোনো মন্তব্য যুক্ত হয়নি!